স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবী জানিয়ে পূর্ব নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন (ENPO) আসন্ন লোকসভা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে । দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব নাগাল্যান্ডের ছয়টি জেলা – কিফিরে, লংলেং, মন, নোকলাক, শামাতোর এবং টুয়েনসাং – নিয়ে আলাদা ‘ফ্রন্টিয়ার নাগাল্যান্ড’ নামে রাজ্য গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে ENPO। এই দাবিকে এতদিন কেন্দ্র যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি বলে মনে করে সংগঠনটি।
গত 28শে মার্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে পূর্ব নাগাল্যান্ড লেজিসলেটরস ইউনিয়নের (ENLU) 20 জন বিধায়ক এবং নাগাল্যান্ডের রাজ্যসভার একমাত্র সদস্য এস. ফাংনন কোন্যাক একত্রিত হন। সেখানেই ENPO তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পূর্ব নাগাল্যান্ডের সমস্ত অঞ্চলে ‘জন জরুরি অবস্থা’ জারি রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, যার ফলে ওই অঞ্চলে এই মুহূর্তে কোন রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা করা যাবে না।
উপেক্ষা এবং অনুন্নয়নের অভিযোগ তুলে আলাদা রাজ্যের দাবি জোরদার করেছে ENPO এবং এও দাবি করেছে যে পূর্ব নাগাল্যান্ডের উন্নয়ন বহু বছর ধরে অবহেলিত হয়ে আসছে। ENLU নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার চেষ্টা করলেও, ENPO তাদের সংকল্পে অটল। কেন্দ্র কর্তৃক ফ্রন্টিয়ার নাগাল্যান্ড রাজ্য সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন এবং নির্বাচনী প্রচার বন্ধ রাখার ব্যাপারে ENPO স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।
জনগণের পূর্ণ সমর্থন নিয়েই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ENPO সভাপতি আর. সাপিকিউ সাংতাম। ফ্রন্টিয়ার নাগাল্যান্ডের দাবিতে কোনো আশ্বাস না পাওয়া গেলেও, মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিওর সাথে আলোচনার মাধ্যমে তাদের দাবি আরও জোরালো করার পরিকল্পনা করেছে ENPO এবং ENLU।
2010 সাল থেকেই আলাদা রাজ্য গঠনের স্বপ্ন দেখছে ENPO। পূর্ব নাগাল্যান্ডের অধিকার এবং উন্নয়নের দাবিতে বহুদিন ধরেই লড়াই চালিয়ে আসছে এই সংগঠনটি।
পূর্ব নাগাল্যান্ডের এই দাবি এবং নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং পূর্ব নাগাল্যান্ডের জনগণের উদ্বেগের সমাধান করবে। ENLU এবং ENPO এর নেতৃবৃন্দও মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের আবেদন জানিয়েছেন।
পূর্ব নাগাল্যান্ডের ছয়টি জেলায় নির্বাচন বর্জনের এই সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলার আশঙ্কা করছে অনেকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বয়কট ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে এবং ভোটের হারকে প্রভাবিত করতে পারে। যদিও ENPO দাবি করছে যে তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ এবং তারা কাউকে ভোট দিতে বাধা দেবে না।
পূর্ব নাগাল্যান্ডের এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছে অনেক অনিশ্চয়তা। সবকিছু নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিক্রিয়ার উপর। যদি কেন্দ্র পূর্ব নাগাল্যান্ডবাসীদের দাবির ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেয়, তবে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে দাবি উপেক্ষিত হলে আন্দোলন আরও জোরালো হতে পারে এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সমস্ত পক্ষেরই সংযম দেখানো, উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান বের করা, এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা একান্ত প্রয়োজন।