সূর্যের প্রথম আলো, মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা আহ্ববান , নতুন জামা কাপড়ে সেজে ওঠা মানুষ, ঘরে ঘরে মিষ্টির সুবাস, আলিঙ্গন, বন্ধুত্ব, সহমর্মিতা – এই সবকিছু মিলিয়েই ঈদুল ফিতর।
পবিত্র রমজান মাসের একমাস সিয়াম সাধনার পর আজ ভারত ও বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর নানা দেশের মুসলিমরা উদযাপন করছে ঈদের আনন্দ।
সকালের প্রথম আলো ফুটতেই ঘরে ঘরে শুরু হয় ঈদের প্রস্তুতি। নতুন জামাকাপড় পরে, মিষ্টির প্যাকেট হাতে, ঈদের জামায়েতের উদ্দেশ্যে রওনা হয় সকলে। মসজিদের সামনে ঈদের জামায়েতের জন্য জড়ো হয় ঈমানদার মুসলমানরা। ‘তাকবির’ ধ্বনিতে মুখরিত হয় আকাশ। জামায়েত শেষে শুরু হয় আলিঙ্গন ও শুভেচ্ছা বিনিময়।
নামাজ শেষে শুরু হয়ে যায় বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো, একসাথে খাওয়া-দাওয়া করা, আর ফিতরার জাকাত দেওয়া। ফিতরার জাকাতের মাধ্যমে সবাই, ধনী-গরীব নির্বিশেষে, ঈদের আনন্দে অংশ নিতে পারে। রাস্তায় রাস্তায় উচ্ছ্বাসের জোয়ার, বাড়িগুলোতে আপ্যায়নের ব্যস্ততা, আর সবখানে ‘ঈদ মোবারক’ শুভেচ্ছার আদান-প্রদান – ঈদের এই আমেজ সবাইকে আলিঙ্গন করে, সবাইকে আপন করে নেয়।
ঈদ উল ফিতরের মূল নির্যাস শুধু ভোজন আর আনন্দেই নয়, বরং আত্ম-কৃতজ্ঞতা এবং আত্ম-প্রতিফলনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসে শেখা শিক্ষাগুলো, আত্মসংযমের শক্তি, এবং ভক্তি ও দানশীলতার মাধ্যমে প্রাপ্ত শান্তি – এইসব নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এটি।
ঈদের খাবার-দাবারও উৎসবের একটি বিশেষ অঙ্গ। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ঈদের খাবারের ধরণে রকমফের হয়, যা বিশ্বব্যাপী ঈদ উল ফিতরের উদযাপনের বৈচিত্র্যকে আরও সমৃদ্ধ করে। কোথাও মিষ্টি সেমাই আর খেজুরের মিষ্টান্নের ঘ্রাণ, কোথাও আবার ঝাল-মশলাদার মাংস আর ভাতের সুবাস – সব মিলিয়ে ঈদের খাবারে যেমন আছে বৈচিত্র্য, তেমনই বৈচিত্র্যময় ঈদ উদযাপনকারী মানুষগুলো।
ঈদ উল ফিতর শুধু মুসলমানদের জন্যই নয়; এটি একটি বিশ্বজনীন উৎসব যা আমাদের ইসলামী সংস্কৃতির সৌন্দর্য এবং শান্তি, দানশীলতা ও সম্প্রদায়-ভাবনার সার্বজনীন মূল্যবোধের এক ঝলক দেখার সুযোগ দেয়। এই ঈদ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে একটি বিভক্ত পৃথিবীতেও ঐক্য এবং আনন্দের এমন মুহূর্ত আছে যা আমাদের সবাইকে একত্রিত করতে পারে।