থাইরয়েডের সুস্থতা আমাদের সার্বিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থাইরয়েড গ্রন্থি ঠিকমত কাজ না করলে শরীরের বিভিন্ন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষ করে থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (টিএসএইচ) এর মাত্রা বেড়ে গেলে হাইপোথাইরয়েডিজম নামক রোগ দেখা দেয়। এই রোগে শরীরের বিপাক ক্রিয়া মন্থর হয়ে যায়, ওজন বেড়ে যায়, অবসাদ, চুল পড়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা দেয়।
থাইরয়েড কমানোর জন্য যে খাবারগুলি অত্যন্ত্য জরুরী:
আমাদের চারপাশে পরিচিত খাবারের মধ্যে এমন অনেক উপাদান আছে যা নিয়মিত খেলে টিএসএইচ এর মাত্রা কমিয়ে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।চলুন সেইসব গুরুত্বপূর্ণ খাবার এবং তাদের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
- নারকেল তেল: নারকেল তেলে আছে মিডিয়াম-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড (এমসিএফএ)। এমসিএফএ শরীরের বিপাক ক্রিয়া বাড়ায় এবং থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি শরীরের প্রদাহ কমাতেও ভূমিকা রাখে।
- আদা: আদা রান্নার অপরিহার্য উপাদান। এটি ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের ভালো উৎস, যা থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও আদাতে আছে জিঞ্জেরল নামক উপাদান যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- হলুদ: হলুদে আছে কারকিউমিন নামক উপাদান, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহরোধী। এটি থাইরয়েড গ্রন্থিতে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমিয়ে থাইরয়েডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
- অশ্বগন্ধা: অশ্বগন্ধা একটি অ্যাডাপ্টোজেনিক ঔষধি, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ টিএসএইচ এর মাত্রা বাড়িয়ে হাইপোথাইরয়েডিজম এর ঝুঁকি বাড়ায়।
- বেরি জাতীয় ফল: ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি ইত্যাদি বেরি জাতীয় ফলে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এসব ফলে আছে ভিটামিন এবং মিনারেল যা থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে।
- বাদাম এবং বীজ: বাদাম, আখরোট, চিয়া বীজ, ফ্লাক্স সিড ইত্যাদিতে আছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর চর্বি, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্ক। এই উপাদানগুলো থাইরয়েড হরমোন তৈরি এবং তার সঠিক কাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
- গ্রিন টি: গ্রিন টি তে আছে ক্যাটচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে এবং প্রদাহ কমায়।
- মেথি: মেথি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। এটি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায় যা পরোক্ষভাবে থাইরয়েডের কাজকেও প্রভাবিত করে।
- গোটা শস্য: বাদামী চাল, ওটস, কুইনোয়া ইত্যাদি গোটা শস্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা হজম ক্রিয়া ঠিক রাখে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে থাইরয়েড গ্রন্থির কাজও ঠিক থাকে।
- দই: দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে থাইরয়েডের কাজও ঠিক থাকে।
- পালং শাক: পালং শাকে আছে প্রচুর আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আয়রনের অভাব থাইরয়েডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- কুমড়ো বীজ: কুমড়ো বীজ জিঙ্কের খুব ভালো উৎস। জিঙ্ক থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে।
- ডিম: ডিমে আছে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি। এই উপাদানগুলো থাইরয়েড হরমোন তৈরি এবং তার সঠিক কাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
- অ্যাভোকাডো: অ্যাভোকাডোতে আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো শরীরের প্রদাহ কমায় এবং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে।
- রসুন: রসুনে আছে অ্যালিসিন নামক উপাদান যা শরীরের প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- গাজর: গাজরে আছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন, যা শরীরে ভিটামিন এ তে পরিণত হয়। ভিটামিন এ থাইরয়েডের সুস্থতার জন্য জরুরি।
- সজনে পাতা: সজনে পাতা বা মোরিঙ্গা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা থাইরয়েডের স্বাভাবিক কাজের জন্য অপরিহার্য। এছাড়াও এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- সামুদ্রিক মাছ: সমুদ্রের মাছে আয়োডিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে। এগুলো থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়া আরও কিছু খাবার: এছাড়াও ডালিম, আপেল, কলা, কমলা, আমলকি, ব্রাজিল নাট, কালোজিরা, তিলের বীজ ইত্যাদি খাবার থাইরয়েডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
থাইরয়েড থাকলে যে খাবার গুলি খাওয়া উচিৎ নয় :
সয়াবিন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি ইত্যাদি খাবারে থাকা গয়েট্রোজেন নামক উপাদান অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে উপরের খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, কোন খাবার কতটুকু খেতে হবে, সেটা নির্ভর করে রোগের ধরন এবং তীব্রতার উপর।