মাসিকের সময় শারীরিক অস্বস্তির সাথে সাথে মেজাজের ওঠা-নামা, এসব তো লেগেই থাকে। কিন্তু চিন্তা নেই, আপনার রান্নাঘরেই রয়েছে এর একটা সহজ সমাধান। মাসিকের সময়টা যাতে একটু সহজ করে কাটে তার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এখানে এমন কিছু খাবারের সন্ধান থাকছে যা আপনার মাসিক চলাকালীন সময়টাকে আরামদায়ক করে তুলতে পারে।
কী কী খাবেন
১.গাঢ় সবুজ শাকসবজি: পালংশাক, বেল, কাঁচ কলা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। এটি ক্লান্তি দূর করে এবং রক্তাল্পতা রোধ করতে সাহায্য করে।
২.সামুদ্রিক মাছ: ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর সামুদ্রিক মাছ প্রদাহ কমাতে এবং মাসিকের ব্যথা উপশম করতে পারে।
৩.পাকা কলা:পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কলা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং পেট ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
৪.আদা: প্রদাহ-বিরোধী গুণের জন্য পরিচিত, আদা মাসিকের ক্র্যাম্প কমাতে বেশ কার্যকরী।
৫.হলুদ: হলুদে কারকিউমিন নামে একটি উপাদান আছে যা ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে পারে।
৬.ডার্ক চকোলেট: পরিমিত পরিমাণে ডার্ক চকোলেট মেজাজ ভালো করে দিতে এবং খিদে কমাতে পারে।
৭.ব্রকলি: ফাইবার এবং ভিটামিনে ভরপুর ব্রকলি হজমের সমস্যা ও পেট ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
৮.বাদাম: কাঠবাদাম, আখরোট এবং কাজুতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৯.বেরি জাতীয় ফল: আঙুর ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, বেরি প্রদাহের সাথে লড়াই করে।
১০.কমলা: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কমলা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
১১.দানা শস্য: ওটস, বাদামী চাল এবং কুইনোয়া ক্রমাগত শক্তি যোগায় এবং মেজাজের তারতম্য কম করে।
১২.দই: দইয়ের প্রোবায়োটিক হজমের উন্নতি করতে এবং পেট ফোলা কমাতে পারে।
১৩.জল: পর্যাপ্ত জল পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি জল ধরে রাখতে বাধা দেয় এবং আপনার শরীরকে সুস্থ রাখে।
১৪.গ্রিন টি :এর শীতলকারী গুণের জন্য পরিচিত, গ্রিন টি ক্র্যাম্প এবং উদ্বেগ কমাতে পারে।
১৫.চর্বিহীন প্রোটিন: মুরগী এবং বিচিজাতীয় খাদ্য শক্তি এবং পেশী সুস্থ রাখতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
মাসিকের সময়ে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
১. তেল-চর্বি জাতীয় খাবার: চিপস, তেলেভাজা, বেশি তেল দিয়ে রান্না করা খাবার বা ফ্যাট-সমৃদ্ধ মাংস – এগুলো হজম হতে বেশি সময় নেয়। তাই পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি বাড়তে পারে।
২. বেশি লবণ যুক্ত খাবার: প্রক্রিয়াজাত খাবার, ক্যানের স্যুপ, নোনতা স্ন্যাকস, ফাস্টফুড – এগুলোতে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি! লবণের কারণে শরীর জল ধরে রাখে, ফলে ফোলাভাব বাড়ে।
৩. কার্বোনেটেড পানীয়: সোডা, স্পার্কলিং ওয়াটার, কোমল পানীয়, এগুলো থেকে গ্যাস তৈরি হয়। পেটে গ্যাস জমে অস্বস্তি আর পেট ফাঁপা আরও বাড়িয়ে তোলে।
৪. প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, বেক করা জিনিসপত্র, রেডি-টু-ইট মিল – এগুলোতে নানারকম অ্যাডিটিভ, প্রিজারভেটিভ থাকে যেগুলো হজমের গোলমাল করে, পেট ফাঁপার সমস্যা বাড়ায়।
৫. চিনি জাতীয় খাবার: বেশি মিষ্টি, মিষ্টি পানীয় ইত্যাদিতে থাকে প্রচুর চিনি। চিনি পেটের ‘ভালো’ ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে বদহজম, পেট ফাঁপা শুরু হয়।
খাদ্যাভ্যাসে একটু যত্নশীল হলে মাসিকের অস্বস্তি অনেকটাই কমিয়ে নিজের যত্ন নেওয়া সম্ভব। এখানে উল্লিখিত খাবারগুলি ক্র্যাম্প থেকে শুরু করে মেজাজের ওঠা-নামা সবকিছু সামাল দেওয়ার জন্য প্রাকৃতিকভাবে আপনার শরীরকে সাহায্য করে। পরের বার মাসিক এলে এই খাবারগুলোর কথা মাথায় রাখুন, নিজের প্রতি যত্নশীল হোন।