মুভি যখন তার দর্শকদের ঠিকভাবে চেনে, তখন সেই মুভির জন্য শ্রদ্ধা না জন্মে পারে না। গডজিলা ভার্সেস কং: দ্য নিউ এম্পায়ার মূলত এমনই একটি সিনেমা যেখানে ‘Reddit’ থেকে গডজিলার উপর করা একটি থ্রেডকে বড় পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে। চমৎকার দৃশ্যায়ন, একের পর এক অ্যাকশন সিক্যুয়েন্স – দ্য নিউ এম্পায়ার আপনাকে নিশ্বাস নেওয়ার সময়টুকু দেবে না, যদি না সেই ‘নিশ্বাস’ আগুন কিংবা বরফের হুঙ্কার না হয়! আইম্যাক্সে দেখলে, পুরো সিনেমাটাই একটা রোলার কোস্টার রাইডের মতো। পুরো সময়টাতেই আপনি চমকে উঠবেন, ভাববেন যে, আচ্ছা এইবার কি দেখা যাবে, বা কি লুকিয়ে আছে আলো-আঁধারির পেছনে! তবে ব্যাপারটাকে খুব গভীরভাবে নেওয়া যাবে না।
এমনিতে এই গল্পটা খুব স্পষ্টভাবেই মনস্টারভার্সের নতুন দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে। এমনটা হলে খুব ভালোই হত যদি সত্যিই যারা এই সিরিজের পঞ্চম সিনেমাটি দেখতে আসছেন তারা সবাই নতুন দর্শক হতেন। বাস্তবে তেমনটা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! গডজিলা সিরিজের সুপারফ্যানরাই লাইনে প্রথমে থাকবেন, যারা প্রতিটি ছোটখাটো বিষয়ও মুখস্থ করে রেখেছেন।
দ্য নিউ এম্পায়ার শুরু থেকেই “গডজিলা ওপরে, কং নীচে” ন্যারেটিভ তৈরি করে । তাই ২০২১ এর গডজিলা ভার্সেস কং দেখার পর আমরা বুঝে যাই যে এই দুই চিরশত্রুর মধ্যে এখন একটা অলিখিত চুক্তি তৈরি হয়েছে যাতে তারা একে অপরের এলাকায় যাবে না। কিন্তু, আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, এই ভঙ্গুর শান্তি বেশিদিন স্থায়ী হয় না। কং এই পুরো সিনেমা জুড়ে প্রধান দানবীয় চরিত্র, যা তাকে আরো মানবিক এবং সহানুভূতিশীল করে তোলে। বয়স বাড়ার সাথে তার পশম ধূসর হয়ে যাওয়া সহ আরও দুর্বল হয়ে পড়ার লক্ষণগুলো স্পষ্ট – এক পর্যায়ে তো দাঁতের ব্যথাতেই সে নাজেহাল। এই নশ্বরতা থেকেই তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের স্পৃহা তৈরি হয়, এবং এই ইচ্ছেটাই মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।
রেবেকা হলের ডাঃ. ইলিন অ্যান্ড্রুজ চরিত্রটিও হতাশাজনকভাবে ‘গডজিলা ভার্সেস কং’-এর বলিষ্ঠ, বুদ্ধিমতী নায়িকা থেকে এবার দত্তক কন্যা জিয়া (কেলি হটল) এবং এক পুরনো কলেজের বন্ধুর প্রতি ভালোবাসায় সফট হয়ে গেছেন। যদিও তিনিই সম্ভবত মূল মানব চরিত্র, কিন্তু এই দুই দৈত্যের মধ্যে পড়ে তার কাজ করার সুযোগ খুব একটা আসে না।
এছাড়া, অ্যান্ড্রুজ ত্রপ্পের-এর কাছে গুরুত্ব হারান যার কাজ শুধু প্রয়োজনে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ থেকে জোরে জোরে পাঠ করে কাহিনী এগিয়ে নিয়ে যাওয়া । কিছু ভাবনার জায়গা আছে আবেগ আছে যেগুলো কখনো পূর্ণতা পায় না। তাহলে আদৌ মা-মেয়ের ভালোবাসার বন্ধনের আইডিয়া এই দানবদের সিনেমায় তোলার কি দরকার ছিল? আবেগ দেখানোর সময় কোথায়! পৃথিবী বাঁচানোর দলটি আবারও একসাথে হয়েছে পৃথিবী বাঁচাতে ,তবে এবার একজন নতুন আরও বুদ্ধিমান ভিলেনের বিরুদ্ধে।
এই সব ছোট ছোট ব্যাপারগুলোকে যদি উপেক্ষা করা হয়,তবে উইঙ্গার্ডের বিষ্ময়কর অ্যাকশন ও দৃশ্যায়নের কল্পনা চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছুতে মন্দ লাগবে না ।