প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে লাউ শাকের যে সব গুণাবলীর কথা উল্লেখ আছে সেগুলি ছাড়াও আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গিয়েছে লাউ শাকে থাকা উপাদান গুলি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিকের মত কাজ করে ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে লাউ শাকের ভূমিকা
পটাশিয়ামের ভূমিকা:
পটাশিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লাউ শাকে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করতে সাহায্য করে। সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে রক্তচাপ কমে আসে। এছাড়া পটাশিয়াম রক্তনালীগুলোকে শিথিল করে, ফলে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ফাইবারের ভূমিকা:
লাউ শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। ফাইবার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
কম ক্যালোরি:
লাউ শাক কম ক্যালোরিযুক্ত, যা ওজন কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপ বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:
লাউ শাকে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ফ্রি র্যাডিকাল কমায় এবং প্রদাহ হ্রাস করে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
উপাদান | পরিমাণ | উপকারিতা |
---|---|---|
ক্যালোরি | ১৫ ক্যালোরি | কম ক্যালোরিযুক্ত, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক |
প্রোটিন | ১.২ গ্রাম | পেশীর গঠন ও মেরামতে সহায়ক |
ফাইবার | ১.৫ গ্রাম | হজমে সহায়ক, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক |
শর্করা | ৩.৫ গ্রাম | শক্তির উৎস |
ফ্যাট | ০.১ গ্রাম | অত্যন্ত কম, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক |
ভিটামিন এ | ২২০০ আইইউ | চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে |
ভিটামিন সি | ১০ মিলিগ্রাম | ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে |
ভিটামিন কে | ১.২ মাইক্রোগ্রাম | রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে, হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী |
পটাশিয়াম | ২৪০ মিলিগ্রাম | রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে |
ক্যালসিয়াম | ৪৪ মিলিগ্রাম | হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে |
ম্যাগনেসিয়াম | ২৫ মিলিগ্রাম | পেশী এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে |
ফোলেট | ৬ মাইক্রোগ্রাম | স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক |
সোডিয়াম | ২ মিলিগ্রাম | কম পরিমাণ, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক |
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য লাউ শাক খাওয়ার কৌশল
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ:
লাউ শাক খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এক বা দুই কাপ লাউ শাক অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
সময় নির্বাচন:
সকালের নাস্তার পরে বা দুপুরের খাবারের পরে লাউ শাক খাওয়া সবচেয়ে ভালো। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
মিশ্র খাদ্যাভ্যাস:
লাউ শাকের সঙ্গে অন্যান্য সবজি মিশিয়ে খেলে পুষ্টির পরিমাণ বাড়ে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এছাড়া লাউ শাক রান্না করে বা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যেতে পারে।
রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ:
লাউ শাক খাওয়ার পরে রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত, যাতে বোঝা যায় এটি কীভাবে প্রভাবিত করছে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
ডায়াবেটিস রোগীদের এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লাউ শাক খাওয়া সবচেয়ে ভালো। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে চিকিৎসক সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।
লাউ শাক একটি পুষ্টিকর সবজি যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা পটাশিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত লাউ শাক খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে লাউ শাক খেলে এর উপকারিতা পাওয়া যায়।তবে সব ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।