ভারত মহাসাগরে ভারতীয় উপকূল থেকে প্রায় ২,৬০০ কিমি দূরে এক নাটকীয় অভিযানে ৩৫ সশস্ত্র জলদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অভিযানের সময় উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে। অভিযানের মাধ্যমে মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েনের ১৭ জন ক্রুকেও উদ্ধার করা হয়েছে।
দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থার তত্ত্বাবধানে ৪০ ঘণ্টা ধরে চালানো এই অভিযানে নৌবাহিনীর মেরিন কমান্ডো (মার্কোস), ভারতীয় বিমান বাহিনীর সি-১৭ বিমান, সী গার্ডিয়ান ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং নৌবাহিনীর স্টিলথ-গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী আইএনএস কলকাতা ও টহল জাহাজ আইএনএস সুভদ্রা মোতায়েন করা হয়েছিল।
ভারতীয় নৌবাহিনী শনিবার সন্ধ্যায় একটি সংক্ষিপ্ত প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে যে আইএনএস কলকাতা গত ৪০ ঘণ্টার মধ্যে “পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমে সফলভাবে ৩৫ জন জলদস্যুকে আটক করেছে এবং জলদস্যুদের জাহাজ থেকে আজ, ১৬ই মার্চ, সন্ধ্যায় ১৭ জন ক্রুকে নিরাপদে উদ্ধার করেছে।” এছাড়া আইএনএস সুভদ্রা, এইচএএলই (হাই অলটিটিউড লং এন্ডুরেন্স) আরপিএ (রিমোটলি পাইলটেড এয়ারক্রাফট), পি৮আই সামুদ্রিক টহল বিমান এবং সি-১৭ বিমান থেকে ড্রপ করা মার্কোস-প্রহার এই অভিযানে অংশ নিয়েছে।
নৌবাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, আটকের পর জলদস্যুরা নৌবাহিনীর দিকে গুলি চালায়। এরপর আইএনএস কলকাতা আত্মরক্ষার জন্য গুলিবর্ষণ করে। জলদস্যুদের পালানো ঠেকাতে নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার ও জাহাজ থেকে তাদের কাছাকাছি সতর্কীকরণমূলক গুলি ছোঁড়া হলেও সরাসরি তাদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়নি। সম্ভাব্য হতাহত এড়াতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে জলদস্যুদের গুলিবর্ষণের খবর পৌঁছালে আইএনএস কলকাতার অধিনায়ককে জলদস্যুদের পালানো রোধে যেকোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর বিমান বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে দ্রুত অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়। সেই অনুযায়ী ভারতের একটি ঘাঁটি থেকে মেরিন কমান্ডোদের নিয়ে একটি সি-১৭ বিমান রওনা হয় এবং তাদের অভিযান এলাকায় এয়ারড্রপ করা হয়। আইএনএস সুভদ্রাকেও ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।
এরপর মেরিন কমান্ডোরা তাদের নৌকা নিয়ে সমুদ্রে অবতরণ করে অপহৃত জাহাজের দিকে এগিয়ে যায়। সেসময় জলদস্যুদের বাধা দেওয়ার জন্য সতর্কীকরণমূলক গুলি ছোঁড়া হয়। এই উত্তেজনাপূর্ণ পদক্ষেপের ফলে অবশেষে জলদস্যুরা তাদের অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করে।
গত বছরের ১৪ই ডিসেম্বর এই জাহাজটিকে সোমালি জলদস্যুরা অপহরণ করেছিল। তারপর স্প্যানিশ ও ভারতীয় নৌবাহিনী যৌথভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে, যা ২০১৭ সালের পর সোমালি জলদস্যুদের প্রথম সফল অপহরণ বলে মনে করা হয়। জাহাজটি শেষ পর্যন্ত সোমালিয় জলসীমায় পৌঁছালেও, জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনার পর নৌবাহিনী জাহাজের একজন আহত ক্রুকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
নৌবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, অপহৃত জাহাজটির গতিবিধি ভারতীয় নৌবাহিনী গোপনে নজরে রাখছিল। যখন জাহাজটিকে আবার আন্তর্জাতিক জলসীমায় জলদস্যুদের ‘মাদার শিপ’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বোঝা যায়, তখনই হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।