আমাদের খাবারের বৈচিত্র্য যতই দুর্দান্ত হোক না কেন, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য যথাযত সুস্বাদু খাদ্যতালিকা তৈরি করাটা বেশ কঠিন কাজ। বিশেষ করে চারিদিকে যখন উৎসবে-অনুষ্ঠানে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন চলে তখন ‘সুগার পেশেন্ট’দের মিষ্টির দিকে সবার আগে নজর পড়ে! তবে মন খারাপের কিছু নেই – সঠিক খাদ্যাভ্যাসের দ্বারা আপনি সুস্থ থাকার পাশাপাশি এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেটা বিশ্বের বহু মানুষকে জর্জরিত করে চলেছে , বিশেষ করে ভারতে এই রোগের প্রকোপ অনেক। রক্তে শর্করার মাত্রা দীর্ঘসময়ের জন্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার ফলে এই সমস্যা হয়। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে মূল ভূমিকা পালন করে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা এবং প্রয়োজনে ওষুধ। তবে ভারতীয় খাদ্যভ্যাসে ভাত, রুটি, ডাল, তেল-ঘি এর বহুল ব্যবহার ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায় ।
রক্তে শর্করার মাত্রার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে কার্বোহাইড্রেট। ভাত, রুটি, ডাল- ভরপুর সাধারণ ভারতীয় খাবারে এই উপাদানের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই সাধারণ ভাত বা ময়দার রুটির বদলে বাদামী চাল, ওটস, রাগি, জোয়ারের মতো জটিল কার্বোহাইড্রেট খাওয়া ভালো। এগুলো থেকে গ্লুকোজ ধীরে ধীরে রক্তে মেশে, ফলে হঠাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার আশঙ্কা থাকে না।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে ফাইবার বা আঁশ সমৃদ্ধ খাবার। সব্জি, শাক-পাতা, সম্পূর্ণ ফল (গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খেয়াল রেখে) – এগুলো থেকে ভালো পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। কাঁচা সালাদ, সিদ্ধ বা হালকা ভাজা সব্জি, ডাল – এগুলো সবই ফাইবারের ভালো উৎস।
পেশী সুস্থ রাখতে ও পেট ভরা অনুভব করাতে প্রোটিন খুবই দরকার। ভারতীয় খাবারে দুধ-দই, পনির, মাছ, মাংস, ডাল, বাদাম – এই সবকয়টি থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়। তেল কম দিয়ে মাছ বা মুরগি, পনির , ডাল তড়কা ইত্যাদি বেশ পুষ্টিকর বিকল্প।
পরিমিত পরিমাণে সঠিক ফ্যাট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জরুরি। সরষে, নারকেল, চিনাবাদামের তেল রান্নায় সামান্য করে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাদাম, বিচি জাতীয় খাবার মুখরোচক হিসেবে বা খাবারের সঙ্গে খেলে শরীরে ভালো চর্বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যোগায়।
মশলা শুধু যে স্বাদ বাড়ায় তাই নয়, ভারতীয় মশলা যেমন হলুদ, দারুচিনি, মেথি, আদা – এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রক্তে শর্করা কমাতেও সাহায্য করে। নিয়মিত খাবারে এই মশলাগুলোর ব্যবহার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
পরিমাণের নিয়ন্ত্রণ: পরিবারগুলোতে সবাই মিলেমিশে খাওয়া-দাওয়া হয়। সেক্ষেত্রে নিজের খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করাটা কঠিন, কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয়। ছোটো প্লেটে খাওয়া, ধীরে চিবিয়ে খাওয়া এবং কতটা পরিবেশন করা হয়েছে সেদিকে খেয়াল রাখলে খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট : ভাজাভুজি বা মিষ্টির বদলে ছোলা, মখনা, কাঁচা গাজর-শসা জাতীয় খাবার বেছে নিন। এগুলো পুষ্টিকর এবং একইসাথে সুস্বাদু ।
মিষ্টির ব্যাপারে সাবধান: উৎসবে-অনুষ্ঠানে মিষ্টি এড়িয়ে যাওয়াটা বেশ কঠিন। সেক্ষেত্রে সুগারফ্রি বা রাসায়নিক চিনি ব্যবহার করা নেই এমন প্রাকৃতিক মিষ্টি খেতে পারেন ।
জল খাওয়া জরুরি: শরীর তরতাজা রাখতে জল খুবই দরকার। জলের পাশাপাশি ঘোল, লেবু-জল, গ্রিন টি ইত্যাদি পানীয়ও শরীরের জন্য উপকারী এবং রিফ্রেশিং।
আমাদের খাদ্যভ্যাসের সাথে মানিয়ে নিয়ে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মূলমন্ত্র হল সচেতনভাবে খাবার বাছাই করা এবং ঐতিহ্যবাহী রান্নার পদ্ধতিতে ছোটখাটো বদল আনা। খাবারের পুষ্টিগুণ জানা, পরিমাণের দিকে নজর দেওয়া, এবং সুস্বাদু খাবারের সাথে স্বাস্থ্যের ভারসাম্য রাখতে হবে। সতর্কতার সাথে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় বদল আনার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়েও স্বাদে-গন্ধে ভরপুর জীবনকে উপভোগ করা সম্ভব!