নাসার মহাকাশযান জুনোর নতুন তথ্যাদি এবং ইও -র আগ্নেয়গিরির দৃশ্য সামনে এলো
বৃহস্পতির বিশাল আকর্ষণের চাপে নিত্য নতুন রূপ নেয় তার উপগ্রহ, ইও। এই উপগ্রহ টি তার লাভা নদী ও বিস্ফোরণের জন্য বিখ্যাত। গ্যালিলিও গ্যালিলিই প্রথম এই উপগ্রহ টির সন্ধান পেয়েছিলেন ১৬১০ সালে, যা আমাদের চাঁদের চেয়ে একটু বড়।
নাসার জুনো মহাকাশযান ২০১৬ সালে এসে বৃহস্পতি ও তার উপগ্রহ নিয়ে কাজ শুরু করে এবং সাম্প্রতিক সময়ে ইও -র উত্তরাংশের কাছাকাছি ১,৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে এসে অদেখা কিছু ছবি তুলতেও সক্ষম হয়েছে। এই ছবিগুলোতে ইও-এর সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, পাহাড় এবং লাভা লেকের চমৎকার দৃশ্য ধরা পড়েছে। নাসা জুনোর ক্যামেরা জুনোক্যামের মাধ্যমে ইও-র একটি বিশেষ লাভা লেক, যার নাম লোকি প্যাটেরা, তার চারপাশে গরম লাভার প্রাচীর এবং মাঝখানে বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জের অসাধারণ কিছু ছবিও তুলেছে।
বৃহস্পতির এই উপগ্রহ সৌরজগতের সবচেয়ে আগ্নেয়গিরিপূর্ণ জায়গা। অবশেষে ‘জুনো’ নামের নাসার মহাকাশযানটি এর বিস্তারিত ছবি সংগ্রহ করতে পেরেছে। ইও-র উত্তর মেরুর প্রথম ছবি, সক্রিয় আগ্নেয়গিরির লাভা উদ্গীরণ, শত শত কিলোমিটার বিস্তৃত লাভা হ্রদ – এই মিশন আমাদের এমন অনেক চমকই দিয়েছে।
কতটা ভয়ঙ্কর এই উপগ্রহ ইও?
পৃথিবীর বাইরে, এক মাত্র এই উপগ্রহ তেই আমরা সক্রিয় আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব জানতে পেরেছি।সূর্যের আলোর প্রতিফলন এই পাহাড়ের চূড়ার ধারালো বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশ করে, যা দূরত্ব ও উচ্চতা পরিমাপে সাহায্য করে।লাভার তাপমাত্রা হাজার হাজার ডিগ্রি হলেও, ইও র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাইনাস ১৪৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত নেমে যায়। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের সময় লাভা বের হয়ে আসে এবং সাথে সাথে জমাট বেঁধে গিয়ে সালফার স্নো তৈরি করে। এই চরম তাপমাত্রার বৈপরীত্য ইওকে এক রহস্যময় পৃথিবীর মতো করে তোলে, যা গবেষকদের কাছে চিরকালীন আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠেছে।
সক্রিয় আগ্নেয়গিরির কারন কী?
ইও-র অভ্যন্তরে সালফার ও ক্লোরিনের প্রাচুর্য খুঁজে পাওয়া গেছে যা দেখায় যে এই চাঁদ তার পুরো ইতিহাস জুড়েই আগ্নেয়গিরি সক্রিয় রেখেছে। চিলির আটাকামা বৃহৎ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (ALMA) দূরবীনের মাধ্যমে এই গ্যাসগুলির সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে । গবেষকরা মনে করেন যে এই গ্যাসের উপস্থিতি ও পরিমাণ ইওকে দীর্ঘমেয়াদী আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করে।ইও-এর ভূমিকা শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যই নয়, তার অবিশ্বাস্য ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও বিরল প্রাকৃতিক ঘটনা স্পেস এডভেঞ্চার ও ভবিষ্যত মিশনের জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।
নতুন আবিষ্কার:
২০২২ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারিতে, ‘জুনো’ মিশন ইও-র মাত্র ১৫০০ কিলোমিটারের মধ্যেই চলে এসেছিল। মিশনের মূল লক্ষ্য বৃহস্পতি গ্রহের গভীর অভ্যন্তর নিয়ে গবেষণা করা হলেও, পাশাপাশি তার উপগ্রহ গুলোও খুঁটিয়ে দেখা ও। জুনোর বিজ্ঞানীরা ইও-র পৃষ্ঠতল নিয়ে অনেক নতুন তথ্য পেয়েছেন। যেমন:
‘লোকি প্যাটেরা’ নামের লাভা হ্রদ:
বিজ্ঞানীরা এটিকে একটা জমাট-বাঁধা লাভার হ্রদ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন যার মাঝে মাঝে কিছু উত্তপ্ত দ্বীপ ভেসে উঠছে।
স্টিপল পর্বত:
সূর্যের আলোয় এর তৈরি দীর্ঘ ছায়া থেকে, ইও-র এই পর্বতটির আকৃতি অনুমান করা গেছে। বিজ্ঞানীরা মজা করে একে ইও-র ম্যাটারহর্ন পর্বতের সাথে তুলনা করেছেন।
ইও-র গঠন সম্পর্কে নতুন ধারণা:
জুনো থেকে পাওয়া তথ্য আর চিলির এক টেলিস্কোপ অ্যারের তথ্য মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন যে ইও -র জন্মের পর থেকেই আগ্নেয়গিরি-সক্রিয়। এর মানে, ৪০০ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে এই চাঁদের ভেতরে আগুন জ্বলে চলেছে।
SwRI in the news: Unprecedented images reveal jaw-dropping features of Jupiter’s ‘tortured moon’https://t.co/jYjXvzJK2i
— Southwest Research Institute (@SwRI) April 25, 2024
এরপরে কী?
আগ্নেয়গিরি, বৃহস্পতির টানাপোড়েন, নানা রকম রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি – ইও র বিজ্ঞানীদের কাছে একটা বিরাট ধাঁধার মতো। ‘জুনো’ যেহেতু বৃহস্পতির উত্তর মেরু অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করেছে, সেক্ষেত্রে হয়তো ইও র দক্ষিণ মেরু সম্পর্কেও একদিন নতুন তথ্য পাওয়া যাবে।
NASA reveals ‘glass-smooth lake of cooling lava’ on surface of Jupiter’s moon Io#NASA #Io #Jupiter pic.twitter.com/xqTzhnkkZe
— B.C. Begley (@BC_News1) April 22, 2024