গরমের দাবদাহে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, আর্দ্রতার মাত্রা ৭০% থেকে ৮০% , মানে গরমের অনুভূতি ছাড়িয়ে যাচ্ছে ৫০ ডিগ্রির কাঁটাকেও । এই অসহনীয় পরিস্থিতিতে সবাই যেন অস্থির হয়ে উঠেছে, তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশুরা। শিশুরা বড়দের মত নিজের যত্ন নিজে নিতে পারেনা তাই স্বাভাবিকভাবে তাদের প্রতি বেশি খেয়াল রাখা জরুরী হয়ে পড়ে ।
তীব্র গরম ও আর্দ্রতায় শিশুদের কী কী সমস্যা হতে পারে
উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা একত্রে শিশুদের জন্য বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
- শরীরে জলের ঘাটতি:
- ঝুঁকির কারণ: বড়দের তুলনায় শিশুদের বিপাক ক্রিয়া বেশি এবং শরীরে জল ধারণ ক্ষমতা কম।
- লক্ষণ: তৃষ্ণা, শুষ্ক মুখ, গাঢ় হলুদ প্রস্রাব, মাথা ঘোরা এবং প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
- প্রতিরোধ: শিশুদের নিয়মিত জল পান করান, তৃষ্ণা না পেলেও। তাদের খাদ্যতালিকায় তরমুজ, শসা, কমলালেবুর মতো জল সমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
- হিট এক্সজশন (Heat Exhaustion):
- ঝুঁকির কারণ: দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা, পরিশ্রম করা এবং পর্যাপ্ত জল না পান করা।
- লক্ষণ: অতিরিক্ত ঘাম, দুর্বলতা, শীত শীত ভাব, ফ্যাকাশে ত্বক, বমি বমি ভাব, এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
- প্রতিরোধ: শিশুদের ঘন ঘন বিশ্রাম নিতে দিন, পর্যাপ্ত জল পান করান, এবং ছায়াযুক্ত বা শীতল স্থানে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করুন।
- হিটস্ট্রোক (Heatstroke):
- ঝুঁকির কারণ: হিট এক্সজশন চিকিৎসা না করালে হিটস্ট্রোক হতে পারে, যা জীবন হানিকর।
- লক্ষণ: দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া (৪০° সে. এর উপরে), গরম, লাল, শুষ্ক ত্বক, দ্রুত নাড়ির স্পন্দন, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বিভ্রান্তি, এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
- প্রতিরোধ: শিশুকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যান, ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছুন, এবং জরুরী চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
- ত্বকে ফুসকুড়ি ও জ্বালাপোড়া:
- ঝুঁকির কারণ: অতিরিক্ত ঘাম ও ঘামের নালি বন্ধ হয়ে গেলে ত্বকে ফুসকুড়ি হতে পারে।
- লক্ষণ: ত্বকে লাল লাল দানা ঘামাচি , চুলকানি এবং অস্বস্তি।
- প্রতিরোধ: ত্বক শুষ্ক ও ঠান্ডা রাখুন। হালকা, ঢিলেঢালা সুতি কাপড় ব্যবহার করুন।
- শ্বাসকষ্ট:
- ঝুঁকির কারণ: উচ্চ আর্দ্রতা হাঁপানির মতো সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে, ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
- লক্ষণ: দ্রুত শ্বাস নেওয়া, ঘড়ঘড় শব্দ, কাশি এবং বুকে টান অনুভব করা।
- প্রতিরোধ: ঘরের ভেতর পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন এবং সম্ভব হলে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। বাইরে বেশি আর্দ্রতা থাকলে বাইরের কাজকর্ম এড়িয়ে চলুন।
এই তীব্র গরম এবং অত্যাধিক আর্দ্রতায় শিশুদের সুস্থ রাখার জন্য করণীয়
- পর্যাপ্ত জল পান:
- বার বার জল পান করতে দিন, ইলেক্ট্রোলাইটস যুক্ত পানীয় খাওয়াতে পারেন।জল সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি খাওয়াতে উৎসাহিত করুন।
- শীতল পরিবেশ:
- ঘরের ভেতর আরামদায়ক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পাখা, সম্ভব হলে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। ঘরের দুই দিকের জানালা খুলে দিয়ে আড় বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। তবে যেহেতু এখন আর্দ্রতা অনেকটাই বেশি তাই একদমই কুলার ব্যবহার করবেন না , যদি নিতান্তই ব্যবহার করেন তবে জল ছাড়া ব্যবহার করুন ।
- উপযুক্ত পোশাক:
- শিশুকে হালকা রঙের, ঢিলেঢালা এবং সুতির মতো বাতাস চলাচল করে এমন কাপড় পড়ান।
- নিয়মিত স্নান:
- ঘন ঘন স্নান করালে বা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিলে শরীরের তাপমাত্রা কমে। স্নানের জলে কয়েকটা নিম বা পুদিনা পাতা ফেলে দিতে পারেন ।
- বাইরের কাজকর্ম সীমিত রাখুন:
- সকাল বেলা অথবা বিকেলের দিকে তাপমাত্রা যখন কমে আসে তখন বাইরের খেলাধুলা করতে দিন। ছায়াযুক্ত জায়গায় বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা রাখুন এবং পর্যাপ্ত জল পান করান।
- খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন:
- হালকা এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়ান। দই, সালাদ, এবং তাজা ফলের মতো শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এমন খাবার খাওয়ান।
- ত্বকের যত্ন:
- ত্বকে মৃদু, অ্যালোভেরা জেল বা ক্যালামাইন লোশন লাগালে ফুসকুড়ি কমে। ত্বক শুষ্ক ও ঠান্ডা রাখুন।
- বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুম:
- শোবার ঘর ঠান্ডা এবং আরামদায়ক রাখুন। যাতে ঘুম ভালো হয় ।