পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে প্লাস্টিক! শুনতে অবাক লাগলেও সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত নানা প্লস্টিকের জিনিসপত্রের মূল উপাদান হল মাইক্রোপ্লাস্টিক , মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো আসলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা , এই মাইক্রোপ্লাস্টিকই জল বাতাস খাবারের নানা উপাদানের মধ্যদিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে শুধু বন্ধ্যাত্ব নয় নানান জটিল সমস্যা তৈরি করে । এই আবিষ্কার একদিকে যেমন বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় নতুন দিক খুলে দেবে তেমনি প্লাস্টিক দূষণ নিয়েও যথেষ্ট উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে ।
আমরা প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক ব্যবহার করি। প্লাস্টিকের বোতল, ব্যাগ, খাবারের প্যাকেট – এসব তো আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু এই প্লাস্টিকগুলো ভেঙে যাওয়ার পর যে অতি ক্ষুদ্র কণা তৈরি হয়, সেগুলোকে বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক এতই ক্ষুদ্র যে, খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু দেখা না গেলেও এরা আমাদের শরীরের ভেতরে ঢুকে নানা ক্ষতি করতে পারে।
নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মানুষ এবং কুকুর, উভয়ের শুক্রাশয়ের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেখানে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। এমনকি শুক্রাশয়ের টিস্যুতে প্লাস্টিকের টুকরোও পাওয়া গেছে। এই আবিষ্কার সত্যিই আতঙ্কের। কারণ, শুক্রাশয় হলো পুরুষের প্রজননতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে শুক্রাণু তৈরি হয়। মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে, যা শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান কমিয়ে দিতে পারে। ফলে পুরুষের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
কিন্তু কিভাবে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক শুক্রাশয়ে পৌঁছায়? গবেষকরা বলছেন, আমরা যেসব খাবার খাই, যে পানি পান করি, এমনকি যে বাতাসে শ্বাস নিই, সেখানেও মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে ঢুকে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই হয়তো এরা শুক্রাশয়েও পৌঁছে যায়।
আরও ভয়ের বিষয় হলো, শুধু মাইক্রোপ্লাস্টিকই নয়, প্লাস্টিকের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিকও শরীরে প্রবেশ করে। এই রাসায়নিকগুলো আমাদের হরমোন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে। ফলে শুধু বন্ধ্যাত্ব নয়, নানা ধরনের শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
এই গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন। তবে এই গবেষণার ফলাফল যে এক ভয়ংকর সত্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কি করতে পারি? সবার আগে প্লাস্টিকের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমাতে হবে। প্লাস্টিকের বোতল, ব্যাগ ব্যবহার না করা, প্লাস্টিকের খাবারের প্যাকেট এড়িয়ে চলা, এমনকি কেনাকাটা করার সময় কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা – এসব ছোট ছোট উদ্যোগও প্লাস্টিক দূষণ কমাতে সাহায্য করবে। সরকারকেও এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, প্লাস্টিক দূষণ শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি। তাই এখনই সচেতন হতে হবে, প্লাস্টিকের বিষাক্ত ছোবল থেকে নিজেদের এবং আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে।