পৃথিবীর মহাসমুদ্রগুলোর সাথে মঙ্গলগ্রহের একটি অপ্রত্যাশিত যোগসূত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে সম্প্রতি, যা আমাদের জলবায়ুর ইতিহাস বোঝার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ড্রিলিং-এর মাধ্যমে পাওয়া নানা রকম বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এই বিস্ময়কর তথ্য।
‘নেচার কমিউনিকেশন্স’ নামক জার্নালে এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, প্রতি ২৪ লক্ষ বছরে পৃথিবীর গভীর সমুদ্রের স্রোতের তীব্রতায় একটি ছোট্টো পরিবর্তন ঘটে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন “মহাজাগতিক গ্র্যান্ড সাইকেল”।
এই মহাজাগতিক গ্রান্ড সাইকেলের মূল কারণ হল পৃথিবী ও মঙ্গলের মধ্যকার মহাকর্ষীয় টানাপোড়েন। এর ফলে দুই গ্রহই নিজেদের কক্ষপথের কিছুটা পরিবর্তন আনে। এই মহাজাগতিক পরিবর্তনের ফলেই প্রতি ২৪ লক্ষ বছরে পৃথিবীতে সূর্যের আলো এবং উষ্ণতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
মজার ব্যাপার হলো, এই চক্রের সঙ্গে মিলে যায় মহাসমুদ্রের তলদেশে স্রোতপ্রবাহের পরিবর্তন – গ্রীষ্মের সময়ে গভীর সমুদ্রের স্রোত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ভূতাত্ত্বিক সময়রেখার উপর জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে সমুদ্র সঞ্চালনকে প্রভাবিত করে, তা বোঝার ক্ষেত্রে এই আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, ভবিষ্যতের জলবায়ুর রূপরেখা অনুমান করতে গেলেও এই তথ্য খুব কাজে লাগবে বলেই ধরনা করা হচ্ছে।
বর্তমানে আমরা যে জলবায়ুর পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি, তার পেছনে অবশ্য মঙ্গলের কোনো হাত নেই। বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছে আজকের জলবায়ু সংকটের কারণ মানুষের বর্ধিত কর্মকাণ্ড। গবেষণাটিতে বেশ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বিশালাকার সাবমেরিন হুইর্লপুল অর্থাৎ জলের ভ্রমিলের। ‘এএমওসি’ যেখানে বিভিন্ন অক্ষাংশে জলের আদানপ্রদান ঘটায়, সেখানে এই ভ্রমিলগুলো কাজ করে বিশাল ‘মিক্সার’ হিসেবে। এরা সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছে জল ও পলিমাটি নাড়াচাড়া করে স্থবিরতা দূর করেতে সাহায্য করে।
এই গবেষণার অন্যতম প্রধান গবেষক, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. অ্যাড্রিয়ানা ডুটকিয়েভিচ জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্রে পাললিক স্তরের বিশ্লেষণে তাঁরা ২৪ লক্ষ বছরের এই চক্র আবিষ্কার করতে পেরে বিস্মিত হয়েছেন। এই চক্র পৃথিবী ও মঙ্গলের কক্ষপথের উপবৃত্তাকার গতির উপর এদের মহাকর্ষীয় অনুসরনের সরাসরি ফল, যার প্রভাব পড়ে পৃথিবীর জলবায়ুতে।
যখন মানুষ মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন দেখছে , তখন এই আবিষ্কার আমাদের মহাজাগতিক গ্রহরাশির পারস্পরিক সংযুক্ততা সম্পর্কে নতুন করে ভাবাচ্ছে। এগুলি আমাদের গ্রহের জলবায়ু এবং মহাসাগরীয় সিস্টেমগুলিকে কীভাবে প্রভাবিত করে, তার গুরুত্বও বিজ্ঞানীরা তুলে ধরেছেন।
এই গবেষণা শুধুই সমুদ্রের তলদেশে লুকিয়ে থাকা প্রাচীন শক্তির কথাই বলে না বরং এই সতর্কবার্তাও দেয় যে, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে মানুষকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।