মানুষের দেহের ভেতরে মাইক্রোপ্লাস্টিক! এ বিজ্ঞানের কল্পকাহিনী নয় বাস্তবের এক ভয়াবহ সঙ্কটের মুখোমুখি আমরা । সম্প্রতি এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এই চাঞ্চল্যকর তথ্যটি প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা ও আঁশ আমাদের শরীরের কোষে কোষে বাসা বাঁধছে। বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষকরা ৬২টি মানব কোষের নমুনা পরীক্ষা করেন এবং ভয়ের ব্যাপার হলো প্রত্যেকটি নমুনাতেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো এক মাইক্রনের চেয়েও ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা। বিজ্ঞানীরা আমাদের দেহের প্রতি গ্রাম কোষে প্রায় ৬.৫ থেকে ৮.৫ মাইক্রোগ্রাম পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছেন।
এর আগে রক্তপ্রবাহেও এই দূষকের সন্ধান মিলেছিল কিন্তু এবারের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি যে ধরণের প্লাস্টিক পাওয়া গেছে তা হলো পলিথিন। প্যাকেজিং আর বোতলে এই প্লাস্টিকের ব্যপক ব্যবহার হয় । এরপরের স্থানে আছে পিভিসি এবং নাইলন। এ তো গেল শুধু পরিমাণের কথা! বিজ্ঞানীদের আসল উদ্বেগ কিন্তু অন্য জায়গায়।
দেহের ভেতরে প্রবেশ করার পর মাইক্রোপ্লাস্টিক মস্তিষ্কসহ সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেই ছড়িয়ে যেতে পারে। সমস্যা হলো এই ক্ষুদ্র দূষকগুলি আমাদের শরীরে স্থায়ীভাবে থেকে যায় কিনা ? নাকি দীর্ঘমেয়াদে কোনো ধরনের ক্ষতি করে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন।
চার বছর আগেই প্রথম মানব কোষে মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করা হয়। তারপর থেকে একের পর এক গবেষণায় এর পরিমাণ শুধু বেড়েই চলেছে। সময়ের সাথে সাথে আমাদের দেহে এর মাত্রা বাড়ার পাশাপাশি, কিছু রহস্যময় স্বাস্থ্য সমস্যার উত্তরও হয়তো এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতিতেই লুকিয়ে আছে। যেমন, ক্রমবর্ধমান ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD) অল্প বয়সেই কোলন ক্যান্সার কিংবা পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস পাওয়া।
২০১২ সালে এক গবেষণায় দেখা যায় IBD-তে আক্রান্ত রোগীদের মলে সাধারণ মানুষের চেয়ে ৫০% বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়। সুতরাং এই দূষকের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সন্দেহের আর অবকাশ নেই।
নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাথু ক্যাম্পেন এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “প্রথম প্লাসেন্টাতে (গর্ভফুল) যখন আমরা মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ দেখি তখন বুঝতে পারি যে এটা পৃথিবীর সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। ব্যাপারটা মোটেও ভালো নয়।”
কোষে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অনুপ্রবেশ আমাদের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্কের এক ভয়ংকর আত্মঘাতী অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। স্পষ্টতই, প্লাস্টিক দূষণ আগের চেয়ে অনেক বেশি ভাবে আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। তাই অবিলম্বে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি জরুরি। এই গবেষণা আমাদের একটা জটিল এবং বিস্তৃত সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করছে যার মোকাবিলা করতে সারা পৃথিবীর একত্রিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।