প্রথম ম্যাচের চুড়ান্ত পরাজয়ের পর হতাশায় ডুবে আছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের ভক্তরা। বুধবার আইপিএল ২০২৪ এর লড়াইয়ে এই দুই দলই তাদের ভাঙা হৃদয় সারিয়ে জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে নামছে।
২০১৩ সাল থেকে টানা ১২ বার নিজেদের প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও গুজরাট টাইটান্সের কাছে শেষ ওভারগুলিতে বেপরোয়া মারের ধাক্কাটা মুম্বই পুরোপুরি নিতে পারেনি। ১৬৯ রান তাড়া করতে নেমে শেষ ছয় ওভারে ৪৮ রানের প্রয়োজন ছিল তাদের, এবং মনে হচ্ছিল খেলাটা আরামেই জিতে নেবে। কিন্তু টাইটান্স দল হঠাৎই ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত মুম্বইকে ১৬২/৯ এ আটকে দেয়।
অন্যদিকে, কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের পারফরম্যান্স আরও অবিশ্বাস্য ছিল। ২০৯ রানের বিশাল লক্ষ্য নিয়ে নেমে ১৪ ওভারে ১১১/৪ করার পর মনে হচ্ছিল খেলা একেবারে হাতছাড়া। শেষ চার ওভারে তাদের দরকার ছিল ৬০ রান। হেনরি ক্লাসেন এবং শাহবাজ আহমেদ আবারও আশার সঞ্চার করলেন, এমনকি শেষ ৫ বলে ৭ রান পর্যন্ত নামিয়ে আনলেন। কিন্তু হর্ষিত রানা তাদের স্বপ্নভঙ্গ করে দলকে জেতালেন।
ক্রিকেটের ভাষায় যদি ভাঙা হৃদয়ের প্রলেপ লাগাতে হয়, তাহলে দ্রুত জয় তুলে নেওয়ার চেয়ে ভালো উপায় আর নেই। মুম্বইয়ের একটুখানি সুবিধা আছে, কারণ তারা সানরাইজার্সের বিপক্ষে শেষ দুটি ম্যাচ জিতেছে, হায়দরাবাদে ২০০+ লক্ষ্য তাড়া করে আরামে জয় তুলে নিয়েছিল। গত মরসুমে হায়দ্রাবাদের মাটিতে খেলা ছয়টি ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি তারা, এবং নিশ্চিতভাবেই এবার থেকে ঘরের মাঠের ম্যাচগুলোয় জয় দিয়ে শুরু করতে মরিয়া হয়ে উঠবে।
সময় : বুধবার, ২৭শে মার্চ, সন্ধ্যা ৭:৩০ (IST)
স্থান : রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, হায়দ্রাবাদ
মাঠের কন্ডিশন : এখানকার পিচ সাধারণত ব্যাট এবং বলের মধ্যে ন্যায্য লড়াইয়ের সুযোগ দেয়। গত মরসুমে ১৮০+ রানই ছিল এভারেজ স্কোর।
হেড-টু-হেড: মুম্বই জিতেছে ১২টি ম্যাচ, সানরাইজার্স জিতেছে ৯টি। ২০২০ সাল থেকে সাম্প্রতিক সময়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এগিয়ে রয়েছে, ৭ টি ম্যাচের মধ্যে তারা ৫ টিতেই জয় লাভ করেছে।
দলের কথা:
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ
- চোট : ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না, দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স এটা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “ও এই মুহূর্তে ভারতে নেই। মনে হচ্ছে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাচ্ছে। আশা করি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ওর সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবো।”
- কৌশল ও ম্যাচআপ: কামিন্স এবং ওয়াশিংটন সুন্দরকে তাড়াতাড়ি বোলিংয়ে আনা সানরাইজার্সের জন্য কাজে দিতে পারে। আইপিএলে কামিন্স ইশান কিশনকে চারবার আউট করেছেন, অপরদিকে সুন্দর তিনবার রোহিত শর্মার উইকেট নিয়েছেন। ভুবনেশ্বর কুমার বনাম হার্দিক পান্ডিয়ার লড়াইটাও সানরাইজার্সের দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, হার্দিককে দুইবার আউট করেছেন এই অভিজ্ঞ পেসার।
- সম্ভাব্য একাদশ: মায়াঙ্ক আগরওয়াল, রাহুল ত্রিপাঠি, এইডেন মার্করাম, হাইনরিখ ক্লাসেন (উইকিটরক্ষক), আব্দুল সামাদ, শাহবাজ আহমেদ, মার্কো ইয়ানসেন, প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), ভুবনেশ্বর কুমার, মায়াঙ্ক মার্কান্ডে, টি নাটারাজান [ইমপ্যাক্ট সাব: নাটারাজানের জায়গায় অভিষেক শর্মা]
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স
- চোট: ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে সূর্যকুমার যাদবের আইপিএল- খেলার অনুমতি মেলেনি, তাই তিনি এখনও দলের সাথে যোগ দিতে পারেননি।
- কৌশল ও ম্যাচআপ: পিযুষ চাওলা মায়াঙ্ক আগরওয়ালের বিপক্ষে বেশ কার্যকরী হতে পারেন। ২০১২ সাল থেকে ডানহাতি লেগস্পিনারদের বিরুদ্ধে মায়াঙ্ক মোট ৯ বার আউট হয়েছেন, যেগুলোর বিপরীতে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১১১.৩৯। জসপ্রীত বুমরাহ ও মায়াঙ্কের ওপেনিং জুটির লড়াইটা দেখার মতো, কারণ বুমরাহ ওপেনার হিসেবে মায়াঙ্কের উইকেট ৩ বার নিয়েছেন মাত্র ১৬টি বল ডেলিভারি করে। অবশ্য, হাইনরিখ ক্লাসেনের বিপক্ষে স্পিনারদের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো হতে পারে। কারণ, ২০২৩ এর জানুয়ারি থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে স্লো বোলারদের বিপক্ষে তিনি ৬৪৮ রান করেছেন ১৯০.৩২ এর স্ট্রাইক রেটে! তবে সেইসাথে তিনি স্পিনারদের হাতে ৯ বার আউট হয়েছেন যেগুলোর মধ্যে ৪ বারই ছিল ডানহাতি রিস্ট স্পিনার।
- সম্ভাব্য একাদশ: রোহিত শর্মা, ইশান কিশন (উইকিটরক্ষক), তিলক বর্মা, নমন ধীর, হার্দিক পান্ড্যা (অধিনায়ক), টিম ডেভিড, শামস মুলানি, পিযুষ চাওলা, জেরাল্ড কোয়েটজি, জসপ্রীত বুমরাহ, লুক উড [ইমপ্যাক্ট সাব: উডের বদলে দেওয়াল্ড ব্রেভিস]
- আইপিএল ২০২২ তে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ( যেখানে তিনি ১৫৮.২৪ এর স্ট্রাইকরেটে ৪১৩ রান করেন) রাহুল ত্রিপাঠি এখনও পর্যন্ত তেমন ছাপ ফেলতে পারেননি। আইপিএল ২০২৩ তে মাত্র একটি অর্ধশতরানের ইনিংস খেলেছেন তিনি, এবং গোয়ার হয়ে দেশীয় ক্রিকেটেও পারফর্ম করেছেন খুব সাধারণ। ১৯ টি ইনিংসের মধ্যে মাত্র একটিতে অর্ধশতক করেছেন তিনি সব ফরম্যাট মিলিয়ে। হায়দ্রাবাদে খেলার সময় তাঁর আইপিএল গড় মাত্র ১৯.১১।
- জসপ্রীত বুমরাহ আইপিএলে ১৫০ উইকেট নেওয়ার মাত্র দুই উইকেটের দূরত্বে। ভুবনেশ্বর কুমারের পর তিনিই দ্বিতীয় ভারতীয় পেসার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করবেন।
স্কোয়াড:
- সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ: মায়াঙ্ক আগরওয়াল, অভিষেক শর্মা, রাহুল ত্রিপাঠি, এইডেন মার্করাম, হাইনরিখ ক্লাসেন (উইকিটরক্ষক), আব্দুল সামাদ, শাহবাজ আহমেদ, মার্কো ইয়ানসেন, প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), ভুবনেশ্বর কুমার, মায়াঙ্ক মার্কান্ডে, টি নাটারাজান, ট্র্যাভিস হেড, গ্লেন ফিলিপস, ওয়াশিংটন সুন্দর, জয়দেব উনাদকট, অনমোলপ্রীত সিং, উপেন্দ্র যাদব, ফজলহক ফারুকি, উমরান মালিক, ঝাড়বেধ সুব্রমণ্যম, সানভির সিং, আকাশ মহারাজ সিং, নিতিশ রেড্ডি।
- মুম্বই ইন্ডিয়ান্স: ইশান কিশন (উইকিটরক্ষক), রোহিত শর্মা, দেওয়াল্ড ব্রেভিস, তিলক বর্মা, টিম ডেভিড, হার্দিক পান্ড্যা (অধিনায়ক), শামস মুলানি, জেরাল্ড কোয়েটজি, পিযুষ চাওলা, জসপ্রীত বুমরাহ, লুক উড, নমন ধীর, রোমারিও শেফার্ড, মহম্মদ নবী, শ্রেয়স গোপাল, বিষ্ণু বিনোদ, অর্জুন তেন্ডুলকর, নেহাল ওয়াধেরা, কুমার কার্তিকেয়, শিবালিক শর্মা, অংশুল কাম্বোজ, আকাশ মাধওয়াল, নুয়ান থুসারা, কোয়েনা মাফাকা।