প্রযুক্তির এই দ্রুত পরিবর্তনশীল যুগে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। বাজারে এত এত মডেলের ফোন থাকায়, নিজের জন্য আদর্শ একটি স্মার্টফোন বেছে নেওয়া বেশ কঠিন কাজ। কিন্তু, ফোনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের দিকে মনোযোগ দিয়ে আপনি এমন একটি ফোন বেছে নিতে পারবেন, যা আপনার প্রয়োজনগুলো ভালোভাবে পূরণ করবে। চলুন এমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করি –
প্রসেসর মোবাইলের ব্রেন
প্রসেসরকে স্মার্টফোনের মস্তিষ্ক বলা হয়। এই প্রসেসরই ফোনের কার্যক্ষমতা এবং দক্ষতা নির্ধারণ করে। একটি শক্তিশালী প্রসেসর নিশ্চিত করে যে আপনি একই সাথে অনেকগুলো অ্যাপ চালাতে পারবেন, অ্যাপ খুলতে সময় লাগবে না, এবং গেম খেলতে গিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। প্রসেসর কেনার সময় সবচেয়ে নতুন মডেলের চিপ কেনার চেষ্টা করুন। এই চিপগুলোর গতি বেশি হয়, এবং কম ন্যানোমিটার (এনএম) প্রযুক্তিতে তৈরি হয় বলে তাড়াতাড়ি গরমও হয় না। কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন সিরিজ বা মিডিয়াটেক এবং অ্যাপলের এ-সিরিজ প্রসেসর তাদের দুর্দান্ত কার্যক্ষমতার জন্য বিখ্যাত। এখানে স্ন্যাপড্রাগন সিরিজ বা মিডিয়াটেকের কিছু ভালো প্রসেসরের বিবরণ দেওয়া হল –
মিডিয়াটেক (MTK)
- ডিমেনসিটি সিরিজ:
- ডিমেনসিটি 9200/9000/9000+: টপ লেভেলের পারফরম্যান্স, সেরা ফিচার, দুর্দান্ত ব্যাটারি ব্যাক-আপ ।
- ডিমেনসিটি 8200/8100/8000: ভালোমানের মিড-রেঞ্জ প্রসেসর মাঝামাঝি ক্ষমতা এবং দামও কম ।
- ডিমেনসিটি 1200/1100/1000 সিরিজ: কিছুটা পুরনো কিন্তু যথেষ্ট শক্তিশালী, বাজেট সচেতন গেমারদের জন্য ভালো অপশন।
- হেলিও জি সিরিজ:
- হেলিও জি99/জি96/জি95: মিড-রেঞ্জের জন্য সলিড প্রসেসর। গেমিং স্পিড এবং গ্রাফিক্সের উন্নতির জন্য মিডিয়াটেক হাইপারইঞ্জিন প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি।
- হেলিও G88/G85/G80: এন্ট্রি-লেভেলের গেমিং, কম চাহিদার গেমের জন্য ভালো।
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন
- স্ন্যাপড্রাগন 8 সিরিজ:
- স্ন্যাপড্রাগন 8 জেন 2/জেন 1/জেন 1+: বর্তমান এবং আগের জেনারেশনের ফ্ল্যাগশিপ। অসাধারণ ক্ষমতা ও ব্যাটারি সাশ্রয়ের সমন্বয়, সবচেয়ে আধুনিক গেমিং ফিচারসহ।
- স্ন্যাপড্রাগন 888/888+/870: পুরনো ফ্ল্যাগশিপ, কিন্তু এখন সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো পারফরম্যান্সের প্রসেসর।
- স্ন্যাপড্রাগন 7 সিরিজ:
- স্ন্যাপড্রাগন 7 জেন 1/778G/778G+: দুর্দান্ত মিড-রেঞ্জ পারফরম্যান্স, চাহিদাপূর্ণ গেমগুলো স্মুথলি চালাতে সক্ষম।
মনেরাখবেন:
- পারফরম্যান্স: ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসরগুলোতে সবচেয়ে ভালো ফ্রেম রেট এবং গ্রাফিক্স কোয়ালিটি পাওয়া যাবে।
- ফিচার: নতুন প্রসেসরগুলোতে থাকতে পারে অতিরিক্ত ফিচার, যেমন রে-ট্রেসিং সাপোর্ট, অ্যাডভান্সড ইমেজ প্রসেসিং, এবং ভ্যারিয়েবল রিফ্রেশ রেট (VRR) সাপোর্ট যাতে গেমপ্লে আরও স্মুথ হয়।
- দক্ষতা: বেশি দক্ষ প্রসেসর তুলনামূলক কম গরম হয়, এবং দীর্ঘক্ষণ গেম খেললে ব্যাটারি ভালো ব্যাকআপ দেয়।
- দাম: ফ্ল্যাগশিপ ফোনের গেমিং প্রসেসরগুলোর দাম বেশি হবে, যেখানে মিড-রেঞ্জ এবং বাজেট-ফ্রেন্ডলি ফোনে সেটি কম।
গুরুত্বপূর্ণ নোট:
- এই লিস্টটি সম্পূর্ণ নয়। নতুন নতুন প্রসেসর সারাক্ষণ বের হচ্ছে।
- ফোনের জন্য শুধু প্রসেসরই একমাত্র বিষয় নয়। ভালোমানের ডিসপ্লে, কুলিং সিস্টেম, ব্যাটারি এবং সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- নির্দিষ্ট প্রসেসর কতটা ভালোভাবে কাজ করবে, তা জানতে সবসময় Antutu বেঞ্চমার্ক এবং রিভিউগুলো দেখে নিন।
স্টোরেজ
আমরা যেহেতু প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাপনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তাই স্মার্টফোনে যথেষ্ট স্টোরেজ থাকা আজ খুবই জরুরি।হাই রেজোলিউশনের ছবি, ভিডিও, অসংখ্য অ্যাপ এবং নথিপত্র রাখার জন্য প্রচুর জায়গার দরকার হয়। তাই চেষ্টা করুন অন্তত ১২৮ জিবি’র স্মার্টফোন নিতে। স্মার্টফোনের ব্যস্ততা যেমন বাড়বে, তেমন স্টোরেজ বাড়ানোর সুযোগও দেখতে হবে। যেসব ফোনে বাড়তি মেমরি কার্ড দিয়ে স্টোরেজ বাড়ানো যায়, সেগুলোর দিকেও নজর দিন।
ছবি তোলার সেরা প্রযুক্তি: ওআইএস ক্যামেরা
ইনস্টাগ্রাম আর স্ন্যাপচ্যাটের যুগে ভালো ক্যামেরাওয়ালা স্মার্টফোন থাকা আজকাল খুব জরুরি। অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (ওআইএস) প্রযুক্তি ছবি তোলার ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক। এটি হাতের কাঁপুনি কমিয়ে ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে সাহায্য করে। ফলে কম আলোতেও ছবি বা ভিডিও পরিষ্কার আসে। ক্যামেরার বৈশিষ্ট্য কেনার সময় শুধু মেগাপিক্সেল দেখেই কিনবেন না। অ্যাপারচারের কোয়ালিটি , সেন্সরের গুণমান, এবং নাইট মোড, পোর্ট্রেট মোডের মতো অতিরিক্ত ফিচারগুলোও দেখে নিন। ওআইএস যুক্ত ক্যামেরাওয়ালা ফোন ছবি তোলার জন্য আদর্শ।
ফাস্ট চার্জিং
আমাদের ব্যস্ত জীবনে স্মার্টফোনের ব্যাটারি চার্জ হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার সময় নেই। ফাস্ট চার্জিং ব্যাটারি চার্জ করার সময়সীমা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এমন স্মার্টফোন কিনুন যেটি ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তিকে সাপোর্ট করে এবং ফোনের সাথেই যে ফাস্ট চার্জারটি দেওয়া হয় । ওয়্যারলেস চার্জিং এবং রিভার্স চার্জিংয়ের মতো সুবিধাও আজকাল পাওয়া যায়। রিভার্স চার্জিংয়ের মাধ্যমে আপনি ফোনটি দিয়েই অন্য ডিভাইস বা ইয়ারবাডও চার্জ করতে পারবেন।
আপনার জন্য সেরা স্মার্টফোনটি বেছে নিতে গেলে আপনাকে বিশেষভাবে ফোনের বৈশিষ্ট্যগুলো খেয়াল করতে হবে, কারণ এগুলোই ফোনের কার্যক্ষমতা এবং আপনার স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করে। প্রসেসর, স্টোরেজ, ওআইএস যুক্ত ক্যামেরার গুণমান এবং ফাস্ট চার্জিং সক্ষমতার উপর মনোযোগ দিয়ে আপনি এমন একটি স্মার্টফোন বেছে নিতে পারবেন যা শুধু বর্তমানেই নয়, ভবিষ্যতেও আপনার চাহিদা পূরণ করবে। মনে রাখবেন, আপনার জীবনযাত্রা ও ফোন ব্যবহারের পছন্দের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্মার্টফোনই আপনার জন্য সেরা।