রাতের নিস্তব্ধতায় আমাদের মন যে কোন দিকে যাত্রা শুরু করে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। আমাদের কল্পনা আর বাস্তবতার মাঝামাঝি জায়গায় নানান গল্প বুনতে থাকে মন। এই গল্পের মাঝেই মাঝে মাঝে চলে আসে দুঃস্বপ্ন, আমাদেরকে ভয় পাইয়ে, মনকে অস্থির করে তোলে। তাহলে কেন এই ভয়ঙ্কর স্বপ্নগুলো আসে আর এর থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়ই বা কী?
রাতের ভয়ঙ্কর স্বপ্নের পেছনের কারণ
দুঃস্বপ্ন হল মনের একধরণের আঁকা ছবি, যেখানে আমাদের গভীর ভয়, চিন্তা, আর মনের অশান্তি ফুটে ওঠে। বিজ্ঞানীরা আর মনোবিদেরা বেশ কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন দুঃস্বপ্নের পেছনে:
- মানসিক চাপ: জীবনের নানান চিন্তা – কাজের চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন, বা নিজের সমস্যা, সবই স্বপ্নের জগতে চলে আসে, নানান ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে।
- ট্রমা বা PTSD: যারা জীবনে ভয়ানক কোনো ঘটনার মধ্যে দিয়ে গেছেন, তারা প্রায়ই স্বপ্নে সেই অভিজ্ঞতাগুলোকেই বারবার দেখেন।
- টিভি, সিনেমা বা বই: ঘুমানোর ঠিক আগে ভয়ের সিনেমা দেখলে বা উত্তেজনাপূর্ণ বই পড়লে সেগুলো স্বপ্নে এসে আমাদের ভয় পাইয়ে দিতে পারে।
- শারীরিক কারণ: অসুস্থতা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বা মাদক সেবনও স্বপ্নের ধরণ বদলে দিতে পারে, দুঃস্বপ্ন বাড়িয়ে তুলতে পারে।
দুঃস্বপ্নের পরে কী করণীয়?
দুঃস্বপ্ন দেখার পরে মানুষের মনে হয় যেন সে হারিয়ে গেছে, ভয় আর বুকের ধুকপুকানি থামতেই চায় না। নিজেকে আবার তাই দ্রুত ঠিক করার জন্য কয়েকটা জিনিস করা যেতে পারে:
- নিজেকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনা: মনে করিয়ে দিতে হবে যে আপনি নিরাপদ, এবং সেটা শুধু একটা স্বপ্ন ছিল। চোখ মেলে চারপাশটা দেখুন, বিছানার চাদরের উপরে শুয়ে চারপাশে হাত দিয়ে ছুঁয়ে অনুভব করুন, একটু জল খান।
- গভীর নিশ্বাস নিন: গভীর ভাবে নিশ্বাস নেওয়া দ্রুত হৃদস্পন্দন আর হাত-পা কাঁপা কমাতে সাহায্য করে, আপনাকে আবার শান্ত করে তুলতে পারে।
- স্বপ্নের গল্প পাল্টান: স্বপ্নের ভয়ঙ্কর অংশের শেষটা বদলে দিন, ভালো একটা শেষ কল্পনা করুন। এতে করে সেই স্বপ্নের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ আসবে, এবং ভয়টাও কম হবে।
- ডায়েরি লিখুন: স্বপ্নটা আর তা দেখে আপনার কেমন লাগছে, সেসব লিখে ফেললে মন হালকা হয়। সময়ের সাথে এতে দুঃস্বপ্ন কমেও আসতে পারে।
- কাছের মানুষকে জাগান: প্রিয় কাউকে স্বপ্নের কথা বললে অনেক সময়ে আরাম পাওয়া যায়।
দুঃস্বপ্ন কমানোর উপায়
দুঃস্বপ্নকে একদম থামানো না গেলেও, সেই সম্ভাবনা কমানোর উপায় আছে। ঘুমানোর আগে মনকে শান্ত করে এমন কিছু করুন, ভয়ের সিনেমা বা খবর এড়িয়ে চলুন, নিজের মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন, এবং সুস্থ জীবন যাপন করুন। যাদের দুঃস্বপ্ন ট্রমা বা মানসিক সমস্যার সাথে জড়িত, তাদের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
স্বপ্নের এই রঙিন পৃথিবীতে ভয়ের স্বপ্নগুলোও একটা অংশ। এরা আসলে আমাদের জীবনের অন্য একটা দিক দেখিয়ে দেয়, যেখানে আমরা হয়তো নিজেকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি। ভয়কে মোকাবিলা করেই আমরা এসব স্বপ্ন থেকেও শিক্ষা নিতে পারি।
মনে রাখতে হবে, স্বপ্নের দুনিয়ায়, ভালো বা মন্দ, সবই আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা। একটু ধৈর্য, নিজেকে বিশ্লেষণ করুণ । এভাবেই সঠিক উপায় অবলম্বন করলে আমরা নিশ্চয়ই এই রাতের ভয়কে জয় করতে পারব।