আগাছার জঙ্গলে বেড়ে ওঠা এই ফটকা ফল নিয়ে শৈশবে খেলা করেনি এমন শিশু খুব কমই আছে । দু হাতের তালু দিয়ে চাপ দিলে ফট করে ফেটে গিয়ে ভেতরের ছোট্ট টম্যাটোর মত ফলটি বেরিয়ে পড়ে । এই ফলটি এবং গাছটির সম্পর্কে আমরা পরিচিত হলেও এর ঔষাধি গুনাগুণ নিয়ে আমরা সচেতন নই , প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অবশ্য বহুকাল আগেই এই গাছের ঔষাধি গুণ নিয়ে বলা হয়েছে তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এই ফলটির যে কার্যকারিতার কথা উঠে এসেছে তা সত্ত্যিই চমকপ্রদ ।
ডায়াবেটিস হলো এমন একটা রোগ যেখানে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। যদি এটাকে নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায়, তাহলে হার্টের অসুখ, কিডনি ফেল, এমনকি স্নায়ুর সমস্যাও দেখা দিতে পারে। দিন দিন ডায়াবেটিসের রোগী বেড়েই চলেছে। তাই সবাই এমন কিছু খুঁজছে যা দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ ক্ষেত্রে ফটকা খুবই কার্যকরী হতে পারে।
স্থানভেদে অবশ্য এই ফলটিকে আরও নানা নামে ডাকা হয় । যেমন- বন টেপরি ইত্যাদি । তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন এই গুনাগুণ নিয়ে সকলেই একমত ।
ফটকা যে কারণে ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগারের ক্ষেত্রে উপকারী
- ফাইবার : ফটকায় আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার। এই ফাইবার শরীরে শর্করা শোষণের গতি কমিয়ে দেয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায় না। এছাড়া ফাইবার খেলে পেট ভরা ভরা লাগে, তাই বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ফটকায় থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর উপাদান দূর করে। এছাড়া, এগুলো ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে যেসব ক্ষতি হয়, সেগুলো থেকেও রক্ষা করে।
- ভিটামিন ও খনিজ: ফটকায় আছে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া আছে বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, যা শরীরের শক্তি জোগায়। আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের মতো খনিজও আছে, যা সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
ফটকা যেভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়: ফটকায় থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনল শরীরের কোষগুলোকে ইনসুলিনের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে। ইনসুলিন হলো এমন একটা হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- শর্করা শোষণে সাহায্য করে: ফটকা শরীরের পেশি এবং লিভারের কোষগুলোকে শর্করা শোষণে সাহায্য করে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে।
- শর্করা হজম হওয়া কমিয়ে দেয়: ফটকার কিছু উপাদান শর্করা জাতীয় খাবার হজম হওয়ার প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়, ফলে খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায় না।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা
ফটকায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি কার্যকর:
- ক্ষতিকর উপাদান দূর করে: ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে যেসব ক্ষতিকর উপাদান তৈরি হয়, ফটকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেগুলোকে দূর করে। ফলে ডায়াবেটিসের জটিলতা, যেমন স্নায়ুর সমস্যা বা চোখের সমস্যা, এড়ানো যায়।
- প্রদাহ কমায়: ডায়াবেটিসের রোগীদের শরীরে প্রদাহ একটি সাধারণ সমস্যা। ফটকা এই প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ফটকা খাওয়ার সহজ উপায়
- পাকা ফল: হালকা টক স্বাদ এবং টম্যাটোর মতো রঙের এর পাকা ফল সরাসরি খেয়ে নিতে পারেন।
- শুকনো ফল: শুকিয়ে নিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন বা স্ন্যাক্স হিসেবে খেতে পারেন।
ফটকা নিয়ে এখনও অনেক গবেষণা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত যেসব গবেষণা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে যে এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকরী। তবে আপনি যদি ডায়াবেটিসের রোগী হন, তাহলে ফটকা খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।