কখনো হাতে বা পায়ে কাঁটা ফোটার মত অস্বস্তি অনুভব হয়? অনেকেই একে হালকা কিছু ভেবে ছেড়ে দেন গুরুত্ব দিতে চাননা । কিন্তু এটা আসলে “নিউরোপ্যাথি” নামের একটা বড় সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে নিউরোপ্যাথি অনেকের মধ্যেই দেখা যায়, কিন্তু অনেকেই এটা ধরতে পারেন না।
এই রোগে নার্ভ ড্যামেজ হয়ে যায়, যার ফলে হাত-পা ঝিনঝিন করা, অবশ হয়ে যাওয়া, এমনকি ব্যথাও হতে পারে। শুরুতে একে সাধারণ কিছু মনে হলেও চিকিৎসা না করালে নিউরোপ্যাথির জন্য হাঁটতে অসুবিধা, ইনফেকশন, এমনকি পা-হাত ফেলার মত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
“নিউরোলজি” জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, এই রোগটা আসলে কত ব্যাপক। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ মানুষের মধ্যেই নিউরোপ্যাথির লক্ষণ দেখা গেছে। অবাক করার ব্যাপার হলো, এদের অনেকেরই আগে নিজের এই অসুখ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। এই রোগ অনেক সময় কোনো লক্ষণ ছাড়াই দেখা দেয়, তাই ধরাও কঠিন।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিউরোলজিস্ট ড. মেলিসা এ. এলাফ্রোস বলেছেন, নিউরোপ্যাথি মানুষের জীবনকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে, সেটা অনেকেই বোঝে না। তিনি বলেন, “নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্ত এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষের শরীরে আচমকা ব্যথা, কাঁটা ফোটার মত অনুভূতি, এমনকি শক লাগার মত অনুভূতি হয়। এতে তাদের ডিপ্রেশনের সম্ভাবনা বাড়ে, আর জীবনের মান কমে যায়।” এছাড়াও নিউরোপ্যাথি অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, এমনকি অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনাও বাড়ায়।
এই গবেষণায় মিশিগানের একটা ক্লিনিক থেকে ১৬৯ জন রোগীর স্বাস্থ্য রেকর্ড পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগই ছিলেন মধ্যবয়সী (গড় বয়স ৫৮ বছর) আর দুই-তৃতীয়াংশই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকেরই আগে থেকে ডায়াবেটিস ছিল, যেটা নিউরোপ্যাথির একটা বড় কারণ।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ মানুষের মধ্যেই নিউরোপ্যাথি ছিল, কিন্তু এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই আগে কখনো জানতেন না যে তাদের এই রোগ আছে। মেটাবলিক সিন্ড্রোম যাদের ছিল, তাদের মধ্যে নিউরোপ্যাথির প্রবণতা অনেক বেশি দেখা গেছে। মেটাবলিক সিন্ড্রোম হলো এক ধরনের শারীরিক সমস্যা, যেমন পেটে অতিরিক্ত মেদ, উচ্চ রক্তচাপ, বেশি ট্রাইগ্লিসারাইড, উচ্চ রক্তে শর্করা এবং কম HDL কোলেস্টেরল। যাদের মেটাবলিক সিন্ড্রোম ছিল, তাদের নিউরোপ্যাথি হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে চারগুণ বেশি ছিল।
গবেষণায় আয় এবং জাতির মত বিষয়গুলোও বিবেচনা করা হয়েছে, কিন্তু নিউরোপ্যাথির উপর আয়ের তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। তবে জাতিগত পার্থক্য ছিল। অন্যান্য জাতির তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ অংশগ্রহণকারীদের নিউরোপ্যাথি হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল।
এই গবেষণা থেকে একটা জরুরী বার্তা পাওয়া যায়: হাত-পায়ে কাঁটা ফোটার মত অনুভূতি হয়তো সাময়িক অস্বস্তি নয়। এটা হতে পারে আপনার শরীরের একটা সংকেত যে নার্ভ ড্যামেজের সমস্যা হচ্ছে। এটা যদি চেক না করান, তাহলে আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের উপর এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।