এই গরমে ঘামাচির সমস্যায় জেরবার অনেকেই । শিশু থেকে বয়স্ক সকলকেই গরমের এই বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় । এমনিতেই প্রচন্ড গরমে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তার উপরে যদি শরীরে ঘামাচি দেখা তবে শুয়ে বসে কোথাও শান্তি পাওয়া যায় না , সারাক্ষণ কুট কুট করতে থাকে ।
সাধারণত শিশুরা এরকম সমস্যায় বেশি ভোগে, তবে বড়রাও যে একেবারে নিরাপদ তা নয়।
ঘামাচি কেন বের হয় ?
গরমে স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম বের হয় । এই ঘাম বের হয় আমাদের রোমকূপের গোড়া দিয়ে । যখন এই রোমকূপের গোড়া কোনো কারণে আটকে যায় তখন ঘাম ঘুলি আর বেরোনোর কোনো পথ পায় না তখন আটকে থাকা ঘামের কারণে প্রদাহ হয় এবং গায়ে ছোট ছোট চুলকানির মত লাল লাল র্যাশ বের হয়। এটাই ঘামাচি
তাই ঘামাচি বন্ধ করতে হলে সবার আগে যেটা করণীয় তা হল , রোমকূপের গোড়া যাতে মুক্ত থাকে সেই ব্যবস্থা করা । এজন্য বেশ কয়েকটি কার্যকরী উপায় দেওয়া হল যা গরমের ঘামাচি বের হওয়া রোধ করতে সাহায্য করতে পারে:
- সঠিক পোশাকের নির্বাচন: ঢিলেঢালা, হালকা কাপড়, বিশেষ করে সুতির কাপড় ত্বককে শ্বাস নিতে দেয় এবং বাতাস ভালো চলাচল করতে সাহায্য করে। এর ফলে ত্বকে ঘাম দীর্ঘক্ষণ জমে থাকে না এবং ঘামের নালী বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: নিয়মিত স্নান ঘাম, তেল এবং ময়লা দূর করে যা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দিতে পারে। বেশি করে ঘাম হওয়ার পরেই স্নান করা বিশেষ জরুরি। ত্বককে জ্বালা করে না এমন মৃদু সাবান দিয়ে স্নান করলেও র্যাশ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- ঠান্ডায় থাকা: যখনই সম্ভব, ঠাণ্ডা, ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন। ভেতরের তাপমাত্রা কম রাখতে পাখা বা এয়ার-কন্ডিশনার ব্যবহার করেও বেশি করে ঘাম হওয়া প্রতিরোধ করা যায়। এটি গরমের ঘামাচি রোধ করতে সাহায্য করে। বাইরের অ্যাক্টিভিটিজ দিনের ঠাণ্ডা সময়ে, যেমন ভোরবেলা বা সন্ধ্যায় প্ল্যান করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
- ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা: ক্যালামাইন লোশন লাগালে ত্বক আরাম পায় এবং গরমের গুটি ওঠা রোধ করে। এর ঠাণ্ডা দেওয়ার উপাদান ত্বক শুকনো রাখে এবং ঘামাচির সম্ভাবনা কম করে।
- শরীরে যথেষ্ট জল রাখা জরুরি: পুরো দিন ধরে পর্যাপ্ত জল পান শরীরে জলের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর ফলে বেশি ঘাম হওয়া কমে এবং গরমের ঘামাচির সম্ভাবনা কমে যায়।
- হালকা কাপড়ের বিছানা: বিশেষ করে গরমের মাসগুলোতে ঘুমানোর সময় হালকা সুতির কাপড় বিছানা এবং পোশাকে ব্যবহার করলে গরমের ঘামাচির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শোওয়ার জায়গাটি যেন ঠান্ডা থাকে এবং ভালো বাতাস চলাচল করে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
- খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন: কোনও কোনও মানুষ মনে করেন যে খুব ঝাল খাবার যার ফলে ঘাম বেশি হতে পারে, এড়িয়ে চললে গরমের ঘামাচির সম্ভাবনা কমে যায়। তাজা ফল ও সবজি খেলে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে, কারণ এগুলোর বেশিরভাগ অংশই জল।
এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি নিয়মিত মানলে গরমের ঘামাচির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। তবে, যদি ঘামাচি বের হয়ে যায় তখন কী করবেন ।
কীভাবে মুক্তি পাবেন এই যন্ত্রনা থেকে
- অ্যালো ভেরা- আরামদায়ক জেল: অনেক ভারতীয় বাড়িতে চিরপরিচিত এই অ্যালোভেরা আরাম ও ঠাণ্ডা দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। এটি শুধু চুলকানি কমায় না, বরং গরমের ঘামাচি সঙ্গে জড়িত প্রদাহও কমায়। সরাসরি আফেক্টেড জায়গায় নতুন অ্যালো ভেরার জেল লাগালে তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়া যায়। এর আরোগ্যকরী গুণ সংক্রমণের হাত থেকেও রক্ষা করে যেগুলির কারণে র্যাশের অবস্থাা আরও গুরুতর হতে পারে।
- নিম-প্রকৃতির অ্যান্টিসেপটিক: নিম পাতা ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস মারতে পারে বলে গরমে ঘামাচির মত ত্বকের জ্বালা কমাতে খুব কার্যকরী। নিম পাতা বেটে লাগালে র্যাশ তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় এবং ইনফেকশনের সম্ভাবনাও কমে। আরও বেশি আরামের জন্য, নিম পাতা জলে ফুটিয়ে তারপর সেই জল দিয়ে আফেক্টেড জায়গা ধুয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যায়।
- চন্দন গুঁড়ো- ঠাণ্ডা করে এবং শুকায়: ভারতীয় ঘরোয়া চিকিৎসায় চন্দনের ব্যবহার অপরিসীম। ঠাণ্ডা দেওয়ার গুণের জন্য চন্দনের গুঁড়ো জলের সঙ্গে মিশিয়ে আফেক্টেড জায়গায় লাগালে ঘামাচির জায়গা ঠাণ্ডা হয় এবং চুলকানিও কমে। এটি অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হিসেবেও কাজ করে, যা ঘাম বেরোনোর নালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
- নারকেল তেল- ময়েশ্চারাইজ করে এবং সুরক্ষা দেয়: নারকেল তেল হালকা এবং চটচটে নয় বলে আর্দ্র গরমকালের জন্য উপযুক্ত। এটি শুধু যে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে তা না, বরং একটা সুরক্ষা দেয় যেটা ত্বকের আরও জ্বালা হওয়া রোধ করে। অল্প করে নারকেল তেল আফেক্টেড জায়গায় লাগালে র্যাশ শুকাতে সাহায্য করে এবং ইনফেকশনের সম্ভাবনাও কমে।
- ফুলার মাটি- শুষে নেয় এবং ঠাণ্ডা করে: ফুলার মাটি এক ধরণের মাটিযা ত্বক থেকে বাড়তি তেল-জল শুষে নিতে পারে। তাই, গরমে গুটি ওঠার সাময়িকভাবে উপকার পেতে এটি খুব ভালো ওষুধ। ফুলার মাটি জলের সঙ্গে মিশিয়ে আফেক্টেড জায়গায় লাগালে বাড়তি ঘাম শুষে নেয়, এবং ওই জায়গাটা ঠাণ্ডা হয়। ফলে, চুলকানি ও অস্বস্তি দুটোই কমে যায়।
- হলুদ- প্রকৃতির নিরাময়কারী: হলুদ অ্যান্টিসেপটিক এবং আরোগ্যকারী বলে সকলেই জানেন। তাই, গরমে ঘামাচি তাড়াতাড়ি সারাতেও হলুদ খুব কার্যকরী। সামান্য জলের সঙ্গে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে আফেক্টেড জায়গায় লাগালে এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরিগুণের জন্য র্যাশ তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
- শসা- প্রাকৃতিকভাবে ঠাণ্ডা দেয়: সসার টুকরো সরাসরি আফেক্টেড জায়গায় লাগালে উপকার পাওয়া যায়। এর প্রাকৃতিক উপাদান ত্বককে শান্তি দেয় এবং চুলকানিও কমায়।
এগুলি শুধু কার্যকরী নয়, ত্বকের পক্ষেও উপকারী, তাই যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য উপযুক্ত। তবে, মনে রাখবেন, এই চিকিৎসাসমূহ হালকা গরমের র্যাশের জন্য। যদি র্যাশ না সেরে আরও খারাপ হয়ে যায়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গরমের মাসে এই সহজ পদ্ধতিগুলির একটা আপনার রোজকার রুটিনে থাকলে গরমে ঘামাচির থেকে বাঁচা যেতে পারে এবং গরমকাল আরামে কাটানো যেতে পারে।