এমন একটা সময়ে এসে আমরা পৌঁছেছি যেখানে আমাদের হাতে হয়তো আছে পয়সা অথচ নেই সত্যিকারের এমন কোনো মানুষ যে আপনাকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরবে । পরম মমতায় হাত রাখবে আপনার হাতে । বিশ্বাসে বেঁধে রাখবে আপনাকে । শুধু এটুকুই আপনাকে রাখতে পারে সুস্থ বাড়িয়ে দিতে পারে আপনার আয়ু ।
অথচ এই ভার্চুয়াল দুনিয়াতে আমাদের সব থেকে অভাব এই জিনিসটারই । বন্ধু আছে হয়তো কিন্তু নেই পরম বিশ্বাস আর মমতায় হাতে হাত রাখা কেউ ।
সম্প্রতি এই বিষয় নিয়েই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য । এই সব ছোটো খাটো আচারণ আমাদের ভালো থাকার পক্ষে কতটা জরুরী তা উঠে এসেছে এই গবেষণায় ।
ভালোবাসার একটু স্পর্শ
রুহর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ কগনিটিভ নিউরোসায়েন্সের গবেষকরা ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যামস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের সাথে মিলে শারীরিক স্পর্শের মানবস্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব রয়েছে সেটা বের করার চেষ্টা করেছেন। প্রায় ১০,০০০ অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে ১৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক গবেষণা বিশ্লেষণ করে এই দলটি স্পর্শের নির্দিষ্ট উপকারিতা এবং এর পিছনের কারণগুলো স্পষ্ট করতে চেয়েছে। নামী জার্নাল নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার-এ ২০২৪ সালের ৮ই এপ্রিল তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, যা মানব স্পর্শের দ্বারা চিকিৎসাগত সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।
নেপথ্যের বিজ্ঞান
এই সমীক্ষার ফলাফলগুলো অনেক তথ্যবহুল এবং চোখে পড়ার মতো। শিশু থেকে বৃদ্ধ– সব বয়সের মানুষের ওপরেই শারীরিক স্পর্শের উপকারিতা দেখা গেছে, বিশেষ করে আলিঙ্গনের ক্ষেত্রে। এটা প্রমাণিত যে খুবই কম সময়ের, কোমল স্পর্শও ব্যথা, উদ্বেগ ও অবসাদ কমাতে পারে। আজকের দ্রুতগতির, প্রায়শই বিচ্ছিন্ন জগতে যেখানে এধরনের সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে, সেখানে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
গবেষণায় মজার বিষয় হলো, মানুষ ও পশু উভয়ের স্পর্শই সবচেয়ে বেশি উপকার করে, এমনকি জড়ো করা কম্বলের মতো জড়বস্তুর স্পর্শেও কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। তবে মানসিক সুস্থতার জন্য জীবন্ত কিছুর স্পর্শের তুলনা নেই। এটা আমাদের প্রানীদের মধ্যে যোগাযোগের একটা সহজাত প্রয়োজনকেই তুলে ধরে।
শিশু থেকে বয়স্ক সকলের জন্য
গবেষণার একটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো বিভিন্ন বয়সের মানুষের ওপর স্পর্শের প্রভাব নিয়ে আলোচনা। নবজাতকের কাছে বাবা-মায়ের স্পর্শ অপরিহার্য, এটা তাদের সান্ত্বনা দেয়, নিরাপত্তা দেয় আর তাদের বিকাশে সাহায্য করে। ডা. জুলিয়ান প্যাকহাইসার বলেছেন,
“স্পর্শের প্রথম দিকের অনুভবগুলো, বিশেষ করে বাবা-মায়ের থেকে পাওয়া, এগুলোই মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্যের ভিত্তি তৈরি করে।”
– ডা. জুলিয়ান প্যাকহাইসার
বয়স বাড়ার সাথে সাথে যে মানুষটি স্পর্শ করছে তাঁর পরিচিতি কম গুরুত্বপূর্ণ হতে থাকে, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এটা স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। ডা. হেলেনা হার্টম্যান ব্যাখ্যা করেছেন, “প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে স্পর্শের প্রভাবের ক্ষেত্রে তেমন কোনও তফাৎ আমাদের গবেষণায় দেখা যায়নি, সেটা পরিচিত কেউ করুক বা পেশাদার কেয়ারগিভার।”
একটা সুন্দর ভবিষ্যতের ভবিষ্যতের আশা
এই বিস্তৃত ডেটা-অ্যানালাইসিস শুধু স্পর্শের প্রভাব ও গুরুত্ব তুলেই ধরেনি, চিকিৎসার ক্ষেত্রে এর ব্যবহারের পথও প্রশস্ত করেছে। স্পর্শের সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা ও দৈনন্দিন কথাবার্তাতে এর ব্যবহার সুস্বাস্থ্যের একটা সহজ কিন্তু কার্যকর রাস্তা তৈরি করতে পারে।
গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে স্পর্শ অবশ্যই সবার সম্মতিতে হতে হবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া আলাদা আলাদা হতে পারে।
পরের বার যখন প্রিয় কারোর সাথে আপনার দেখা হবে, মনে রাখবেন তাঁকে জড়িয়ে ধরার মাধ্যমে আপনি শুধু ভালোবাসা প্রকাশ করছেন না – সেটা তাঁকে সুস্থ রাখতে ভালো রাখতে অনেকটাই সাহায্য করবেন ।