বিশ্বে প্রাণঘাতী জন্মগত ত্রুটির হার কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে এক অসাধারণ গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে । নতুন এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, খাবার লবণে ফলিক অ্যাসিড মিশিয়ে দেওয়াটায় এমন কিছু পরিবর্তন আনতে পারে যাতে স্পাইনা বিফিডা, অ্যানেন্সেফালির মতো নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (বা জন্মগত ত্রুটি) রোধ করা যাবে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার নবজাতক শিশু এরকম সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
১৯৯৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শস্যজাতীয় খাদ্যে ফলিক অ্যাসিড যুক্ত করা বাধ্যতামূলক। এটি নবজাতকের নিউরাল টিউব ডিফেক্ট রোধে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। যদিও আর্থিকসামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে এই পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে , কারণ এখানে সকলের ক্রয়ক্ষমতা সমান নয় । এই সমস্যাটি মাথায় রেখেই আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল একটি বিকল্প পথের সন্ধান দিয়েছেন – খাদ্য লবণের মাধ্যমে । লবণ সারা বিশ্বব্যাপী মানুষের খাদ্যতালিকার নিত্যপ্রয়োজনীয় অংশ।
এই গবেষণায় দক্ষিণ ভারতের চারটি গ্রামের ৮৩ জন গর্ভবতী নন এমন মহিলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতে এমন জন্মগত ত্রুটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। ২০২২ সালে চার মাস ধরে এই মহিলারা তাদের প্রতিদিনের খাবারে ফলিক অ্যাসিড মেশানো আয়োডিনযুক্ত লবণ খেয়েছেন। এর ফলাফল ছিল আশাপ্রদ – তাদের রক্তে ফোলেটের মাত্রা যে মাত্রা ছিল সেই ফোলেটের মাত্রা ৩.৭ গুণ বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থার একেবারে শুরুর দিকে এই ফোলেট খুবই জরুরি – শিশুর জন্মগত ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য।
গবেষণার প্রধান লেখক তথা ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার কলেজ অফ মেডিসিনের নিউরোসার্জন ডঃ জগি পাটিসাপু এই পদ্ধতির কার্যকারিতা এবং সহজবোধ্যতার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন , “লবণের মাধ্যমে ফলিক অ্যাসিড সরাসরি রক্তে প্রবেশ করতে পারে, ফোর্টিফিকেশনের এই পদ্ধতি শুধু সাশ্রয়ী-ই নয়, বাস্তবায়ন করাও খুব সহজ।”
যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যে ফোর্টিফিকেশন প্রোগ্রামের ক্রমাগত সাফল্য সত্ত্বেও অনেক দেশেই এই ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর পিছনে যেমন বড় আকারে ফোর্টিফিকেশনের উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকা বা রাজনৈতিক উদ্যোগের অভাব । খাদ্যে ফোর্টিফিকেশন প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে যেসব দেশ হিমশিম খায় তাদের জন্য লবণে ফলিক অ্যাসিড যোগ একটি সমাধানের পথ দেখাতে পারে।
এই গবেষণার প্রভাব শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রভাব মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে। কারণ ওই দেশগুলিতে জন্মগত ত্রুটির জন্য চিকিৎসা বা সার্জারির সুযোগও নেই বললেই চলে। এমোরি ইউনিভার্সিটির রোলিন্স স্কুল অফ পাবলিক হেলথের সহযোগী অধ্যাপক বিজয়া কাঞ্চেরলা জানালেন “স্পাইনা বিফিডার মতো অবস্থা নিয়ে ওই অঞ্চলে বেশিরভাগ শিশুই বেঁচে থাকে না, এই অবস্থা প্রতিরোধ করা কেবল চিকিৎসাগত দিক থেকেই জরুরি নয়, মানবাধিকার রক্ষার জন্যও এটি অপরিহার্য।”
এই অসাধারণ গবেষণার প্রভাব বিশ্বব্যাপী গভীর ভাবে পড়তে পারে – এই গবেষণা জন্মগত ত্রুটি সংঘটিত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।