কল্পনা করুন, মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে বসে আছেন, হঠাৎ ব্যাটারি শেষ! চার্জ দিতে বসলেন, এক মিনিটের মধ্যে ফুল চার্জ! এমনকি ল্যাপটপ বা ইলেকট্রিক গাড়ি, খাবার খাওয়ার ফাঁকে চার্জ দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়া! এসব কি স্বপ্ন? না! এবার হয়তো বাস্তবেই সম্ভব।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এমন এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন, যা আমাদের চিরচেনা চার্জিং প্রক্রিয়াকে পাল্টে দিতে পারে। তারা এমন এক বিশেষ এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম তৈরি করেছেন, যাকে বলা হয় সুপারক্যাপাসিটর। এই সুপারক্যাপাসিটর সাধারণ ব্যাটারির চেয়ে অনেক দ্রুত চার্জ নিতে পারে।
কিন্তু কিভাবে এই অসাধ্যসাধন সম্ভব হলো? গবেষকরা বলছেন, সুপারক্যাপাসিটরের ভেতরে আয়ন নামে এক ধরনের ক্ষুদ্র কণা থাকে। এই আয়নগুলোর চলাচলের ওপর নির্ভর করে সুপারক্যাপাসিটর কত দ্রুত চার্জ নিতে পারবে। আগের সুপারক্যাপাসিটরগুলোতে এই আয়ন চলাচলের পথ বেশ জটিল ছিল। কিন্তু গবেষকরা সেই পথকে আরও সহজ করে দিয়েছেন। ফলে সুপারক্যাপাসিটর আরও দ্রুত চার্জ নিতে পারছে।
এই আবিষ্কারের প্রভাব কিন্তু শুধু আমাদের দৈনন্দিন জীবনেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর ব্যাপ্তি আরও বিশাল। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে এই আবিষ্কার নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। সৌর বা বায়ু বিদ্যুৎ যেহেতু সবসময় পাওয়া যায় না, তাই এসব বিদ্যুৎ সঞ্চয় করে রাখাটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই সুপারক্যাপাসিটর দিয়ে খুব দ্রুত বিদ্যুৎ সঞ্চয় করে রাখা যাবে, যা সোলার বা বায়ু বিদ্যুতের ব্যবহার আরও বাড়িয়ে দেবে।
তবে গবেষণা এখনো চলছে। গবেষকরা বলছেন, এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। যেমন, সুপারক্যাপাসিটরের আকার ছোট করা, খরচ কমানো, স্থায়িত্ব বাড়ানো ইত্যাদি। কিন্তু তারা আশাবাদী, একদিন এই প্রযুক্তি সবার নাগালে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
এই আবিষ্কারের সম্ভাবনা অনেক। ভবিষ্যতে হয়তো আমরা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে গাড়ি পর্যন্ত সবকিছুই মুহূর্তের মধ্যে চার্জ করে নিতে পারব। এমনকি বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার হতে পারে।
এই গবেষণা শুধু একটা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, এটা একটা সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। একদিন হয়তো এই প্রযুক্তির বদৌলতে আমাদের জীবনযাত্রা আরও সহজ হবে, পরিবেশবান্ধব হবে। আর সেই দিন হয়তো খুব বেশি দূরেও নয়।