স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ হিসেবে আমরা প্রায়ই খাদ্যের বিশুদ্ধতা নিয়ে চিন্তিত থাকি। সোনালী রঙের এই তরলটি শুধু স্বাদেই মিষ্টি নয়, এর রোগ নিরাময় ক্ষমতা প্রাচীনকাল থেকেই প্রশংসিত। কিন্তু বাজারে এত প্রকারের মধু আছে যে কোনটা যে খাঁটি, তা বোঝা সত্যিই মুশকিল। আসল মধু চেনার উপায় না জানলে, অর্থের অপচয় তো হয়ই, সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকিও থেকে যায়। তাই আসুন জেনে নেই কিছু ঘরোয়া উপায়ে মধুর বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের সহজ কৌশল।
ঘনত্ব দেখে বোঝার চেষ্টা করুন
আসল মধু সম্পূর্ণ অনন্য এক গঠনের অধিকারী। এটি ঘন, মসৃণ, একটানা স্রোতের মত চামচ থেকে ঝরে। মৌমাছিরা ফুলের রস থেকে যে নির্যাস সংগ্রহ করে, সেটি প্রাকৃতিকভাবেই ঘন হয়। অন্যদিকে, নকল মধুতে চিনি, জল বা অন্যান্য উপাদান মেশানো থাকে, যা একে তুলনামূলকভাবে পাতলা করে তোলে। চামচ দিয়ে মধু তুলে উল্টে ধরুন, লক্ষ্য করুন তা কীভাবে পাত্রে ফিরে যাচ্ছে। আসল মধু চট করে চামচ ছেড়ে নামতে চাইবে না, যেন নিজের ঘনত্বকেই জাহির করতে চায়।
জলের সাথে মিশিয়ে দেখুন
জল আর খাঁটি মধুর মধ্যে তেমন বনিবনা হয় না। একটি স্বচ্ছ গ্লাসে স্বাভাবিক তাপমাত্রার জল নিন। এবার এক চামচ মধু গ্লাসে ছেড়ে দিন। আসল মধু প্রায় অমিশ্রিত ভাবে গ্লাসের তলায় গিয়ে জমা হবে। এর কারণ, মধুতে খুবই কম পরিমাণে জল থাকে। কিন্তু নকল মধুর ক্ষেত্রে, মেশানো অতিরিক্ত জলের উপস্থিতির কারণে তা জলের সঙ্গে দ্রুত মিশে যেতে শুরু করবে।
আগুনে জ্বালিয়ে দেখুন
এই পরীক্ষাটি একটু মজাদার! একটি শুকনো কাঠি বা দেশলাই কাঠির মাথা মধুতে ভালো করে ডুবিয়ে নিন। এবার কাঠিতে আগুন ধরানোর চেষ্টা করুন। কাঠিতে লেগে থাকা মধু যদি খাঁটি হয় তাহলে জ্বলে উঠবে। মধুতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকায় এটি সম্ভব। কিন্তু ভেজাল মধুতে অতিরিক্ত জল থাকায় কাঠিতে আগুন লাগবে না, বরং আর্দ্রতা অনুভূত হবে।
কাগজে ফেলে পরীক্ষা করে দেখুন
সাদা কাগজ বা টিস্যুতে এক ফোঁটা মধু ফেলুন। আসল মধু তেমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে না। এটি মোটামুটি ফোঁটার আকারেই থেকে যাবে কারণ মধুতে জলের পরিমাণ কম এবং ঘনত্ব বেশি। কিন্তু নকল মধুতে ভেজাল থাকায় তা দ্রুত কাগজে শোষিত হয়ে যাবে।
মেয়াদ দেখেই বুঝুন
আসল মধুর মেয়াদ অবিশ্বাস্য রকমের দীর্ঘ! প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন মিশরের ফারাওদের সমাধিতেও হাজার বছরের পুরনো মধু খুঁজে পেয়েছেন, যা কিনা এখনও ভোজ্য! সময়ের সাথে সাথে আসল মধুতে ক্রিস্টালাইজেশন হয় – চিনির দলা পাকানোর মত ঘটনা। এটি আসল মধুরই বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে নকল মধু তরল অবস্থাতেই থেকে যায় কিংবা মিষ্টির চিনির মতো শক্ত হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় এতে গাঁজনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যায়।
খাঁটি মধু শুধু স্বাদেই মিষ্টি নয়, মধুর মধ্যে রয়েছে প্রকৃতির নির্যাস, যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারী। একটুখানি সচেতনতা ও এই সহজ পরীক্ষাগুলি আপনাকে নকলের ফাঁদ এড়িয়ে আসল মধুর সন্ধান দিতে পারে। সবশেষে মনে রাখবেন, মধু কেনার সময় শুধু দাম বা ব্র্যান্ডের দিকে তাকাবেন না, নিজের চোখকে বিশ্বাস করুন, খাঁটি মধুর সন্ধান করুন।