গরমকাল পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। এই সময় পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়া যেমন আনন্দের, তেমন কিছুটা দুশ্চিন্তারও। কিন্তু কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে একটু পরিকল্পনা মাফিক ঘুরলে গরমের মধ্যেও আপনার পরিবারের ভ্রমণটা উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে। গরমের হাত থেকে বাঁচতে কী করবেন, আর কী কী ওষুধ সঙ্গে রাখা জরুরি তা একবার চোখ বুলিয়ে নিন ।
জল খাওয়া জরুরি
গরমের হাত থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায় হলো পর্যাপ্ত জল খাওয়া। তীব্র রোদে আপনার এবং আপনার পরিবারের সদস্যরা খুব তাড়াতাড়ি ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারেন, যা ক্লান্তির কারণ হতে পারে বা হিট এক্সজশন বা তার থেকেও খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ছোটদের জন্য জল খাওয়ার ব্যাপারটা মজার করে তুলুন। তাদের পছন্দের রঙিন জলের বোতল কিনে দিন, অথবা শসা, লেবু, ইত্যাদি দিয়ে ফ্লেভারড ওয়াটার বানিয়ে ঘুরতে নিয়ে যান। এতে তাদের জল খেতে বেশি ইচ্ছে করবে ও শরীরে জলের ঘাটতিও পূরণ হবে।
পোশাক : আরামের সঙ্গে স্টাইল
গরমে আরামদায়ক পোশাক পরা খুব জরুরি। ঢিলেঢালা, হালকা রঙের জামাকাপড় পছন্দ করুন, যা গরম শুষে নেওয়ার বদলে ফিরিয়ে দেয়। সুতি, লিনেন, রেয়নের মতো কাপড় খুবই আরামদায়ক, এই কাপড়গুলোতে বাতাসের চলাচল ভালো হয়। বাচ্চাদের মজার হাট বা সানগ্লাস কিনে দিন, যা পরতে তাদের উৎসাহ হবে। এতে তারা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা পাবে।
ঘোরার জন্য সঠিক সময়
যে কোনও বাইরের কাজ সকালে বা বিকেলে করার চেষ্টা করুন। এই সময় সূর্যের তেজ কম থাকে। থিম পার্ক বা অন্য খোলা জায়গায় ঘুরতে গেলে দেখুন ওরা সন্ধেবেলায় খোলা থাকে কিনা। সন্ধেয় ঘুরতে যাওয়া দিনের বেলার চেয়ে অনেক বেশি মজার ও আরামদায়ক হতে পারে।
সানস্ক্রিন: সূর্যের হাত থেকে রক্ষা পেতে
SPF 30 বা তার বেশি ক্ষমতার ব্রড স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন লোশন সারা শরীরে লাগিয়ে নিন বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে। প্রতি দু-ঘণ্টা অন্তর বা সাঁতার কাটা অথবা ঘেমে যাওয়ার পরে আবার লাগাতে হবে। বাচ্চাদের স্টিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে দিতে পারেন। আপনার তত্ত্বাবধানে নিজেরাই যখন সানস্ক্রিন লাগাবে, তখন খুব মজা পাবে। এটা ওদের একটা দায়িত্বও শেখাবে।
গরম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য
আপনার ব্যাগে এমন কিছু জিনিস রাখুন যা আপনাকে গরমের হাত থেকে বাঁচাবে। যেমন:
- ব্যাটারিচালিত ছোট পাখা
- শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য টাওয়েল বা ছোট স্প্রে বোতল, যার মধ্যে জল ভরে মুখে বা গায়ে স্প্রে করতে পারবেন
- ছোট ইনসুলেটেড কুলার, যেটাতে কোল্ড প্যাক আর ঠাণ্ডা খাবার রাখা যাবে
জরুরি ওষুধপত্র এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম
ছুটিতে গেলে কেউ অসুস্থ হবে, এটা চিন্তাতেও আসে না। কিন্তু একটু প্রস্তুত থাকলে ক্ষতি কী? আপনার ফার্স্ট এইড বক্সে এগুলো রাখুন:
- ডিহাইড্রেশন রুখতে ইলেক্ট্রোলাইট পাউডার বা ট্যাবলেট
- হঠাৎ করে অ্যালার্জি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন
- ব্যাথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন
- ক্ষত সারাতে ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক ওয়াইপস, গজ
খাবারদাবার সুরক্ষিত রাখুন
স্ন্যাকস বা খাবার প্যাক করার সময় মাথায় রাখুন যাতে সেগুলো তাড়াতাড়ি নষ্ট না হয়ে যায়। ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ ইত্যাদি স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়ানো যেতে পারে। ক্রিম জাতীয় বা দুগ্ধজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন, এগুলো বাইরে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নষ্ট হতে পারে এমন কোনও খাবার রাখলে আইস প্যাক দিয়ে কুলারে করে নিয়ে যান।
বাচ্চাদের শেখান এবং সচেতন করুন
বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলুন। ওদের শরীরের দিকে নজর দিতে বলুন। ওদের বুঝিয়ে দিন যে খুব গরম লাগলে, মাথা ঘুরলে বা ক্লান্তি লাগলে তা যেন অবশ্যই আপনাকে জানায়। ছায়া কোথায় আছে খুঁজে বের করা, গরম থেকে রেহাই মেলে এমন ইনডোর কাজকর্ম খুঁজে বের করা, বা লাইব্রেরি, মিউজিয়াম বা শপিং মলে ঢুকে যাওয়া – বেড়াতে বেরিয়েও এইসব বিষয়ও মাথায় রাখুন ।
আরও যে বিষয়গুলি মনে রাখা জরুরী
বিশ্রাম নিতে ভুলবেন না: গরমের দিনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়া খুবই স্বাভাবিক। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। বিরতিতে ছায়াযুক্ত স্থান খুঁজুন, কিছুক্ষণের জন্য বসুন, এবং জল খেয়ে শরীর ঠান্ডা করে নিন। যদি দেখেন কেউ বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, বিশ্রামের সময় বাড়িয়ে দিন।
স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিন: ভ্রমণের অন্যতম আনন্দ হল নতুন নতুন জায়গার খাবার চেখে দেখা। গরমের সময় রাস্তার ধারের স্টল থেকে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেস্তোরাঁর সন্ধান করুন। দই, লস্যি, ফলের রস ইত্যাদিকে প্রাধান্য দিন। এগুলো শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।
পরিবহন যথাযথভাবে বেছে নিন: যদি বেশি দূরে যান, তবে এমন পরিবহন বেছে নিন যেটা হাওয়া চলাচল করে এবং আরামদায়ক। এসি গাড়ি বা ট্রেনে যাত্রা বেশি সুবিধাজনক হবে। যতটা সম্ভব চেষ্টা করবেন পিক আওয়ারে ভিড় এড়িয়ে চলতে।
হালকা ব্যাগ বহন করুন: ভ্রমণে যাবার সময় ব্যাগ যত হালকা হবে, ততই আরাম। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেবেন না, যেগুলো দরকার সেগুলোই নিন। আরও ভালো হয় যদি ব্যাকপ্যাকের মতো কিছুর মধ্যে সবকিছু নিয়ে যান, তাহলে দুই হাত ফাঁকা থাকবে।
কর্মক্ষম থাকুন: হিট স্ট্রোক হওয়া গরমে একটা বাস্তব সমস্যা, বিশেষ করে প্রবীণ বা শিশুদের ক্ষেত্রে। হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলি জানুন। যদি মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, শরীর গরম হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, মাথাব্যথা –এইরকম উপসর্গ দেখেন, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ভ্রমণের মূল লক্ষ্যই পরিবারের সঙ্গে স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত কাটানো। এইসব সতর্কতা মেনে চললে এবং ঠিকভাবে প্রস্তুত থাকলে যাত্রাপথে আনন্দের দিকেই বেশি নজর দিতে পারবেন। তাই দেরি না করে ব্যাগ গোছাতে শুরু করুন! প্রস্তুত হয়ে নিন, এবং গরমকে উপেক্ষা করে পরিবারের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ুন পছন্দের গন্তব্যে ।