আমাদের দেশে গরমকাল যে কতটা ভয়াবহ , তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! ঘর থেকে বেরোনো তো দূরের কথা, ঘরের ভেতরেই তাপে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় এসি তাই বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজন। কিন্তু বাজার ছেয়ে আছে এত এসি, কোনটা যে আপনার ঘরের জন্য উপযুক্ত, বাজেটের মধ্যে আছে, এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, তা বোঝা সত্যিই মুশকিল। চিন্তা নেই, এসি কেনার সময় মাথায় রাখার মতো কিছু জরুরি টিপস নিয়ে এসেছি, যাতে আপনার টাকাও বাঁচে, আর গরমকালটাও আরামে কাটে।
১. স্প্লিট নাকি উইন্ডো? জায়গা বুঝে এসি বেছে নিন
এসি কেনার সময় এই প্রশ্নটা সবার মনেই আসে। স্প্লিট এসি দেখতে সুন্দর, কম শব্দ করে, জানলা না থাকলেও লাগানো যায়। তবে দামে একটু চড়া, আর লাগানোর খরচও আছে। উইন্ডো এসি দেখতে ততটা আকর্ষণীয় না হলেও, ছোট ঘরের জন্য বেশ কার্যকরী, লাগানোও সহজ। সিদ্ধান্তটা নির্ভর করছে আপনার ঘরের ধরন এবং ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর।
২. ঘরের আকার বুঝে সঠিক সাইজ
ঠিকমতো টনেজের এসি বেছে নেওয়া খুবই জরুরি। সাধারণত, প্রতি ৫০০ স্কোয়ার ফিট জায়গার জন্য ১ টন কুলিং ক্যাপাসিটি দরকার। রুমের আকারের তুলনায় এসি ছোট হলে ঘর ঠাণ্ডা করতেই হিমশিম খেয়ে যাবে, আর বেশি বড় হলে অযথা বিদ্যুতের খরচ বাড়বে।
৩. স্টার রেটিং মানেই বিদ্যুতের খরচ কমানো
ব্যুরো অফ এনার্জি এফিশিয়েন্সি (বিইই) রেটিং দেখে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোন এসি কতটা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। বেশি স্টার রেটেড মডেলগুলো সাশ্রয়ী, ফলে বিদ্যুতের বিল কম আসে। যদিও প্রথমে দাম একটু বেশি মনে হতে পারে, দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুতের খরচ কমে যাওয়ায় সেটা পুষিয়ে যায়।
৪. ইনভার্টার টেকনোলজি:
ইনভার্টার টেকনোলজি যেন এসির জগতে একটা বিপ্লব এনে দিয়েছে। সাধারণ এসি যেখানে একটা নির্দিষ্ট গতিতে চলে, ইনভার্টার এসি ঘরের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে কম্প্রেসারের গতি কম-বেশি করে, ফলে বিদ্যুতের অপচয় কম হয়। দাম একটু বেশি হলেও, কম বিদ্যুতের খরচ এবং আরামের বিচারে এটাই বর্তমানে শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি।
৫. এয়ার কোয়ালিটি এবং অতিরিক্ত ফিচার
দূষণের মাত্রা যত বাড়ছে, ততই এসি-র সাথে বিল্ট-ইন এয়ার পিউরিফায়ারের চাহিদা বাড়ছে। এতে যে শুধু ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ থাকে তাই নয়, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়াতে ডিহিউমিডিফিকেশন ফিচারও বেশ কাজে দেয়। স্মার্ট কানেক্টিভিটি, অটো-ক্লিনিং প্রভৃতি ফিচার দামে বাড়তি হলেও, বিশেষ প্রয়োজন মেটাতে পারে।
৬. শুধু কেনার দাম নয়, লং–টার্ম খরচ বুঝে কিনুন
এসি কেনার সময় অনেকেই শুধু সামনের দাম দেখে কিনে ফেলে, কিন্তু চলতি খরচটাও মাথায় রাখা জরুরি। সস্তার এসি বিদ্যুত বেশি খরচ করে, ফলে পরবর্তীতে বিল অনেক বেশি আসে। তাই সামান্য দাম বেশি হলেও, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মডেলে বিনিয়োগ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ।
৭. ইনস্টলেশন এবং বিক্রয়োত্তর সার্ভিস
পরিশেষে, প্রফেশনাল ইনস্টলেশন এবং ভালো আফটার-সেলস সার্ভিসের গুরুত্ব বলে বোঝানো যায় না। ঠিকভাবে না লাগালে এসি ভালো কাজ করবে না, বিদ্যুত বেশি খাবে, বারবার মেরামতিরও প্রয়োজন হতে পারে। তাই যেসব ব্র্যান্ডের বিক্রয়োত্তর সার্ভিসের সুনাম আছে, সেগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
তবে হ্যাঁ যেহেতু এই সবে মাত্র গরম পড়া শুরু হয়েছে তাই এই সময়ে এসি কিনলে দাম বেশি পড়তে পারে । তাই কয়েকদিন অপেক্ষা করুন বড় বড় ই- কমার্সগুলি তাদের সামার সেল আনতে চলেছে । তখন কিনলে অনেক সস্তাতে পাবেন ।
এই পরামর্শগুলি মাথায় রাখলে, আপনি এবার ভালো করে বুঝেশুনে এসি কিনতে পারবেন। মনে রাখবেন, সেরা এসি সেটাই, যেটা আপনার চাহিদা পূরণ করবে, বাজেটের মধ্যে থাকবে, এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষাতেও সাহায্য করবে। গরমকাল আর ভয়ের কারণ নয় – ঘরে স্বস্তির হাওয়া নিয়ে আসুন, এবং সেই সাথে টাকাও বাঁচান!
গুরুত্বপূর্ণ কথা
- বার্ষিক মেইনটেন্যান্স করাতে ভুলবেন না। ফিল্টার পরিষ্কার রাখা এবং নিয়মিত সার্ভিসিং করালে এসি ভালো কাজ করবে ও দীর্ঘদিন টিকবে।
- সরকারি সাবসিডি বা অফার সম্পর্কে খোঁজ রাখুন। অনেক সময় এনার্জি এফিশিয়েন্ট এসি কেনার জন্য সরকারের তরফে বিভিন্ন স্কিম থাকতে পারে।
- নামী ব্র্যান্ড মানেই সবসময় ভালো এসি নয়। দোকানে যাওয়ার আগে বিভিন্ন ব্র্যান্ড সম্পর্কে অনলাইনে পর্যালোচনা (রিভিউ) পড়ে নেওয়া ভালো। বাজেটের মধ্যে কম পরিচিত কিন্তু ভালো রেটিং পাওয়া ব্র্যান্ডও থাকতে পারে।
এবার আপনার পালা! কোন এসি–র মডেল কিনেছেন এবং কেন, সেটা আমাদের জানাতে ভুলবেন না কমেন্টে !