মহাকাশে কি এই উল্টো কৃষ্ণগহ্বরের সত্যিই কোনো অস্তিত্ব আছে? কৃষ্ণগহ্বরের যমজ ভাই হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই বস্তুটি কি বিজ্ঞানের কল্পনা নাকি বাস্তবতা?
কৃষ্ণগহ্বরকে আমরা এতদিন একটা একমুখী রাস্তা হিসেবেই জেনে এসেছি। চিরচেনা এই মহাজাগতিক বস্তু তার অসম্ভব শক্তিশালী মহাকর্ষের টানে আলো পর্যন্ত গিলে ফেলে।মহাবিশ্বের অন্যতম রহস্যময় বস্তু হল ব্ল্যাকহোল, এটা মোটামুটি ভাবে আমাদের কাছে পরিচিত। কিন্তু এরই সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা নাকি – শ্বেত বিবর বা হোয়াইট হোল।
কল্পনা করুন হোয়াইট হোল নাকি ব্ল্যাক হোলের সম্পূর্ণ বিপরীত একটা বিষয়। একটি সব যদি সব ফিরিয়ে দেয় তবে অন্য টি সব গিলে খায়।বেশ মজার কিন্তু বিষয় টা।যদিও বিষয় টা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যেও ধোঁয়াসা রয়েছে বিস্তর। আইনস্টাইনের ‘সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে’র মাধ্যমেই মূলত এই বস্তুর জন্ম।
এবার একটু বোঝার চেষ্টা করা যাক এই শ্বেত বিবর বা হোয়াইট হোল কী?একটি কৃষ্ণগহ্বর যদি সময়ের উল্টোদিকে চলতে থাকে তাকেই মূলত শ্বেত বিবর বলা হয়। মনে করুন কৃষ্ণগহ্বরের সমস্ত কর্মকাণ্ডের একটি ভিডিও বানিয়ে আপনি যদি সেটাকে উল্টো করে চালান, তবেই তা মূলত একটি শ্বেত বিবরের কাজের নমুনা পাওয়া যাবে। যেখানে কৃষ্ণগহ্বরে কিছু ঢুকলে আর বের হতে পারে না, শ্বেত বিবর কিন্তু কোনো কিছুকেই ভেতরে ঢুকতে দেয় না। বরং ভেতরে থাকা সবকিছুকে মহাকাশে মুক্ত করে দেয়।কেন্দ্রে একটি ‘সিংগুলারিটি’সহ ইভেন্ট হরাইজন দিয়ে শ্বেত বিবর গঠিত, ঠিক কৃষ্ণগহ্বরের মতোই। কিন্তু এই দিগন্ত পেরিয়ে কিছু ঢোকা অসম্ভব।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ‘লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি‘ তত্ত্বে কিছু উন্নয়নের কারণে শ্বেত বিবর নিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, শ্বেত বিবর আসলে ব্ল্যাকহোলেরই চূড়ান্ত পরিণতি! তত্ত্বটির মূল কথা হলো, মহাবিশ্বের সবকিছুই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ‘কোয়ান্টা’ দিয়ে তৈরি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ব্ল্যাকহোলের ভেতরে যখন বস্তু এই ক্ষুদ্র স্তরে পৌঁছে যায়, তখন এক বিরাট কোয়ান্টাম বিকর্ষণ বল সৃষ্টি হয়। আর এই শক্তির কারণেই ব্ল্যাকহোলটি তখন শ্বেত বিবরে পরিবর্তিত হয়।
এই তত্ত্ব নিয়ে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে । যেমন- ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রের সিঙ্গুলারিটি, তথ্যের বিপর্যয় ইত্যাদি। কিন্তু তাহলে প্রশ্ন ওঠে, আমরা শ্বেত বিবর দেখতে পাচ্ছি না কেন? এর উত্তরও দেয় ‘আপেক্ষিকতা তত্ত্ব’। ব্ল্যাকহোলের কাছাকাছি এলাকায় মহাকর্ষের প্রভাব এতটাই বেশি যে ওই অঞ্চলের সময় আমাদের মতো দূরবর্তী পর্যবেক্ষকদের তুলনায় অনেক, অনেক ধীরগতিতে চলে। যে কারণে একটি ব্ল্যাকহোল থেকে শ্বেত বিবরে রূপান্তরিত হতে আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিলিয়ন-বিলিয়ন বছর লেগে যেতে পারে!
বিজ্ঞানীরা এখন আদিম ব্ল্যাকহোলগুলোর সন্ধান করছেন, যেগুলো সম্ভবত মহাবিশ্ব সৃষ্টির পরপরই জন্ম নিয়েছিল। এই ক্ষুদ্র ব্ল্যাকহোলগুলো হয়তো ইতিমধ্যেই শ্বেত বিবরে পরিণত হয়েছে। যদি তাই হয়,তাহলে কখনও হয়তো এই রূপান্তরের সময় গামা রশ্মির তীব্র ঝলকানি আমরা দেখতে পাবো। আবার, ওই শ্বেত বিবরগুলো হয়ে উঠতে পারে স্থিতিশীল এবং ক্ষীণ বস্তু, যেগুলো মহাবিশ্বের রহস্যময় ‘ডার্ক ম্যাটার বা অদৃশ্য বস্তুপুঞ্জের একটি অংশ।