মিষ্টি খেতে সকলেই ভালোবাসে । উৎসব আনন্দ আয়োজন সমস্ত ক্ষেত্রেই মিষ্টির বহুল প্রচলন আমাদের সংস্কৃতির অংশ । আর এই মিষ্টির অন্যতম উপাদান হল চিনি । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্যি যে এই চিনিই ডেকে আনে আমাদের শরীরের নানাবিধ জটিল সমস্যা । শিশুরা সাধারণত মিষ্টি খাবার পছন্দ করে, আর এই মিষ্টি খাবারের প্রধান উপাদান হিসেবে চিনি ব্যবহার করা হয় । তাই চিনির এমন একটি বিকল্প খুঁজে বের করা দরকার যার স্বাদ চিনির থেকে কোনো অংশে কম নয় বরং বেশি এবং যা আমাদের শরীরে ফেলবে না কোনো বিরূপ প্রভাব । চিনির সেই বিকল্প হল তালের গুড় ।
তালের গুড়
মূলত এপ্রিল এবং মে-জুন মাসে তালগাছের ফলদন্ডের অগ্রভাগকে কেটে সংগ্রহ করা হয় তালের রস । এই তালের রসকে বিশেষ পদ্ধতিতে জ্বালিয়ে তৈরি করা হয় তালের গুড় ।
পুষ্টিগুণে ভরপুর
তালের গুড় অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। চিনি যেখানে শুধু সুক্রোজ দিয়ে তৈরি, সেখানে তালের গুড়ে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়ামের মতো অনেক খনিজ পাওয়া যায়। শরীরের হাড় মজবুত করা, পেশির কাজ ঠিক রাখা, আর সামগ্রিকভাবে শরীরের ক্রিয়াকলাপ ঠিক রাখার জন্য এই খনিজগুলো খুবই দরকারী। অপরদিকে, চিনি প্রসেসিংয়ের সময় প্রায় সব পুষ্টি উপাদান হারিয়ে ফেলে।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম
তালের গুড়ের একটা বড় সুবিধা হল এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কম। জিআই দিয়ে বোঝা যায় কোন খাবার কত তাড়াতাড়ি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যে খাবারের জিআই বেশি, সেগুলো খেলে রক্তে শর্করা হু হু করে বেড়ে যায়, আবার তাড়াতাড়ি কমেও যায়, ফলে শরীর দুর্বল লাগে আর খিদেও বেড়ে যায়। কিন্তু তালের গুড়ের জিআই কম, মানে এটা খেলে শরীরে শক্তি ধীরে ধীরে আসে আর বেশিক্ষণ থাকে। তাই ডায়াবেটিস যাদের আছে, বা যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য তালের গুড় অনেক ভালো।
আয়রনের উচ্চমাত্রা
তালের গুড়ে আয়রন উচ্চমাত্রায় থাকে যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। শিশুদের জন্য আয়রন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর
তালের গুড়ে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যেটা শরীরের প্রদাহ কমায় আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফেনলিক যৌগের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে ক্ষয় থেকে বাঁচায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেলে হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো অনেক রোগের ঝুঁকি কমে যায় ।
প্রাকৃতিক আর কম প্রক্রিয়াজাত
চিনির তুলনায় তালের গুড় তৈরির প্রক্রিয়া অনেক সহজ আর প্রাকৃতিক। তাল গাছের রস জ্বাল দিয়ে তালের গুড় তৈরি হয়। ফলে এর সব পুষ্টি আর স্বাদ ঠিক থাকে। অন্যদিকে, আখের চিনি অনেক ধাপে পরিশোধিত হয়, ফলে এর অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় আর ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশে।
হজমে সাহায্য করে
তালের গুড় হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করে, যা খাবার ভালোভাবে হজম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। চিনি খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে, কিন্তু তালের গুড় তা করে না।
স্বাভাবিক ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স
তালের গুড়ে থাকা পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা শিশুদের সঠিক হাইড্রেশন এবং স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য
তালের গুড়ে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শিশুদের ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন র্যাশ এবং চুলের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
উপাদান | উপকারিতা |
---|---|
আয়রন (Iron) | রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। |
পটাসিয়াম (Potassium) | শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। |
ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium) | পেশি এবং স্নায়ুর কার্যক্রমে সহায়তা করে, হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং মাইগ্রেন প্রতিরোধে সাহায্য করে। |
ফসফরাস (Phosphorus) | শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে এবং হাড় ও দাঁতের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। |
ভিটামিন B কমপ্লেক্স (Vitamin B Complex) | শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রম উন্নত করে। |
ভিটামিন C (Vitamin C) | শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে। |
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidants) | শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে সুরক্ষা প্রদান করে, যা বয়স বৃদ্ধির প্রভাব কমায় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। |
কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrates) | শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে। |
ডায়েটারি ফাইবার (Dietary Fiber) | হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। |