বিগত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে অসহ্য গরম পড়ছে , এই গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে অনেকেই নানারকম উপায়ের সন্ধান করছেন । শুধু ফ্যানে চালিয়েও স্বস্তি না মেলায় মানুষ দিশেহারা হয়ে কোথায় গেলে স্বস্তি পাবে তাই খুঁজে চলেছে ।
অনেকেই তাই সস্তা বিকল্প হিসাবে এয়ার কুলারকেই বেছে নিচ্ছেন । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের এই আবহাওয়াতে এয়ার কুলার আদর্শ নয় বরং তা আমাদের অস্বস্তিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে । কারণ বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০% এর বেশি হলে এয়ার কুলার কার্যকরী নয় ।
কেন এয়ার কুলার ব্যবহার করা উচিৎ নয়
এয়ার কুলারে জল থেকে বাষ্প বেরিয়ে হাওয়াকে ঠান্ডা করা হয়, আর এই প্রক্রিয়াতেই সাথে সাথে হাওয়ায় আর্দ্রতা বাড়তে থাকে। পশ্চিমবঙ্গে তো জলবায়ু ইতিমধ্যেই আর্দ্র এই গরমে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০% এর বেশি । এই আর্দ্র পরিবেশে যদি এয়ার কুলার চালানো তবে আর্দ্রতা আরও বাড়বে । গরম হবে আরও অস্বস্তিকর ভ্যপসা চ্যাপচাপে । এর ফলে গায়ের ঘাম সহজে শুকোতে চাইবেনা যে কারণে শরীরের তাপমাত্রাকে স্থিতিশীল রাখতে অসুবিধা হবে এতে আরও বড় সমস্যা হতে পারে ।
আর্দ্রতা বেড়ে গেলে স্বাস্থ্যের কী ক্ষতি হয়
এয়ার কুলার চালালে আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে শরীরের নানান ক্ষতি হতে পারে। বাতাসে অনেক বেশি ময়েশ্চার থাকলে ছত্রাক, ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়ার মতো জীবানুদের বাড়তে খুব সুবিধা হয়। চ্যাপচাপে পরিবেশে এগুলোর সংখ্যা খুব দ্রুত বেড়ে যায়, যাদের অ্যাজমা বা অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও এয়ার কুলারে জল জমে থাকেে, ঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে তাতে মশার লার্ভাা তৈরি হতে পারে, যেখান থেকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো অসুখ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকেে।
গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত
গবেষণা থেকে জানা গেছে যেখানে ‘রেলেটিভ হিউমিডিটি’ ৬০ শতাংশের থেকে বেশি হয়ে যায়, সেই পরিবেশে ইভাপোরেটিভ কুলারের কার্যকারিতা অনেক কমে যায়। Journal of Environmental Health Perspectives-এর মতো পত্রিকায় যেমন একাধিক একাধিক আর্টিকেলে দীর্ঘক্ষণ আর্দ্র পরিবেশে থাকলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বা অন্যান্য গরম-সম্পর্কিত অসুখবিসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে বলে জানানো হয়েছে । বিশেষজ্ঞরা বলেন যে পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের মতো আর্দ্র জায়গায় যেখানে হিমিডিটি লেভেলটা প্রায়ই ৬০% ছাড়িয়ে যায়, সেখানে অন্য কোন উপায়ে ঠাণ্ডা হবার বন্দোবস্ত ভাবা উচিত।
এয়ার কুলার ছাড়া অন্য কী ব্যবহার করা যেতে পারে
আর্দ্র আবহাওয়ার মধ্যে এয়ারকুলারের এত সমস্যা, তাহলে উপায়? সেক্ষেত্রে এয়ার কন্ডিশনার, বিশেষ করে যেগুলোর ‘ডিহিউমিডিফায়ার ফাংশন’ থাকে সেগুলো অনেক বেশি কাজের। এয়ার কুলারের মতো না, এয়ার কন্ডিশনার হাওয়াকে ঠান্ডা করার সাথে সাথে তা থেকে ময়েশ্চারও শুষে নেয়, আরামের আর্দ্রতার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। দাম একটু বেশি পড়লেও স্বাস্থ্য এবং আরামের কথা চিন্তা করলে আর্দ্র অঞ্চলের জন্য এয়ারকন্ডিশনার কেনাটাই ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত । নইলে কুলার থাকলে আলাদা ডিহিউমিডিফায়ার যন্ত্রও রাখতে হবে ঘরে ঘরকে শুষ্ক রাখার জন্য , এক্ষেত্রে আবার বেশ ব্যয়বহুল হয়ে যাবে ব্যাপারটি ।