যোগ্য-অযোগ্য মোট ২৬০০০ জনের চাকরি বাতিলের পর আবার ২০১০ এর পর সকল মোট ৫লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করল কলকাতা হাই কোর্ট। চরম অনিশ্চয়তার কবলে চাকুরিজীবি থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীরা। যারা ওবিসি সংরক্ষণের সুবিধা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে পেয়েছে কি হবে তাদের??
সরকারি চাকুরিজীবিরা ও আর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রইল না, প্রথমে ২০১৬ এ নিয়োগ হওয়া সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং এবার সব ওবিসি সার্টিফিকেট অধিকারী চাকুরিজীবিরা। শুধু চাকরির ক্ষত্রেই নয় ওবিসি সার্টিফিকেট আরও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সংরক্ষিত আসনে ভর্তি থেকে শুরু করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কাট অফ মার্কসে ছাড়, চাকরির পরীক্ষায় আবেদন, সামাজিক প্রকল্পে আবেদন, সরকারি ভাতা সহ অনেকক্ষেত্রেই প্রয়োজন ওবিসি সার্টিফিকেটের। উচ্চশিক্ষায় ফেলোশিপ পেতেও সুবিধা পান যারা ওবিসি ক্যাটাগরির মধ্যে পড়েন। সবকিছুই এখনো পর্যত এক ধোয়াশা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ওবিসি সরকারী চাকুরিপ্রার্থী বলেন, ” গুটিকয়েক নির্দোষের জন্য সব্বাইকে শাস্তি দেওয়া এখন কলকাতা হাইকোর্টের ট্রেন্ড হয়ে গেছে।”
যদিও এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ থেকে এই রায় ঘোষণা হয়েছে। মমতা ব্যানার্জী এদের নাম না করে জানান, ” ভদ্রলোককে আমি জাজ হিসাবে সম্মান করি। কিন্তু উনি অনেক কিছুতে বিখ্যাত। ক’দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী বলে বেড়াচ্ছেন, সংরক্ষণ কেড়ে নেবেন। সেটা কখনও হয়? তা হলে তো সংবিধান ভেঙে দিতে হয়। এটা হতে পারে না। এই রায় আমি মানি না। ২৬ হাজার চাকরি ওরা বাতিল করেছিল, তখনও আমি সেই রায় মানিনি। বুধবার যে রায় দিয়েছে, তা বিজেপির রায়। আমরা মানি না। ওবিসি সংরক্ষণ চলছে, চলবে।”
এই রায় কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতে যাবার হুশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “‘আমাকে ওরা চেনে না। আমি মাথা নত করার লোক নই। মুসলিমরা কেন তফসিলিদের চাকরিতে ভাগ বসাবে? ওরা এত খারাপ নয়। মোদীবাবু আগুন নিয়ে খেলছেন। তফসিলিদের সংরক্ষণ আপনি বাতিল করতে চাইছেন। এটা হতে পারে না।’’
The High Court's orders have unequivocally declared the advertisements published by @BJP4India to be egregiously disrespectful and defamatory.
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) May 22, 2024
Smt. @MamataOfficial announced her intent to pursue defamation charges against those responsible for disseminating such malicious… pic.twitter.com/OCy8Wbvn9m
শুধু মমতা নয়। শালবনীর সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ” হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ ওবিসি সংরক্ষণ বাতিল করে দিয়েছে। ক্ষমতায় আসার আগেই এই রূপ, আসার পরে কী হবে, তা হলে ভাবুন! কুড়মি, ওরাওঁ, সাঁওতাল, সবাইকে সাবধান করছি, বিজেপিকে ভোট দিলে খারাপ সময় আসবে। বিজেপি ওবিসিদের সংরক্ষণ কেড়ে নিতে চাইছে।”
আবারও দোষী-নির্দোষ এর ভেদাভেদ না করেই সবাইকে ই শাস্তি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পরপর এই সিদ্ধান্ত কে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছেন। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট থেকে অবসর প্রাপ্তির পর এক বিচারপতি নিজেই তার আরএসএস এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করেছেন। তার কিছুদিন পরেই এহেন রায় সাধারণ মানুষের মনে একটা প্রশ্নচিহ্ন অবশ্যই তৈরি করছে। ভারতীয় বিচার-ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হল একজন নির্দোষ এরও যাতে শাস্তি না হয়। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের পরপর দুই বিতর্কিত রায় কি মানুষ বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাবে তা সময় বলবে।
অবশ্য কোর্ট এদিন আরও বলেছেন , যারা ওবিসি সার্টিফিকেটের সুবিধা নিয়ে বর্তমানে কর্মরত কিংবা চাকরীর প্রক্রিয়ার মধ্যে বহাল আছেন তাদের ক্ষেত্রে এই রায় প্রযোজ্য হবেনা । মহামান্য হাইকোর্টের এই নিরদেশের পরেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না অনেকেই অযাথা এই বিড়ম্বনায় তাঁরা যথেষ্ট শঙ্কিত ।