কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মানুষের শরীরের সাথে প্রযুক্তির অভিনব মেলবন্ধনের এক দারুণ সম্ভাবনা দেখিয়েছেন। তাঁরা এমন একটি কৃত্রিম আঙুল তৈরি করেছেন, যা খুব সহজেই মানুষের হাতের সাথে যুক্ত করে অতিরিক্ত আঙুল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। একে তাঁরা বলছেন, “দ্য থার্ড থাম্ব” বা তৃতীয় আঙুল ।
গবেষকরা ৩ থেকে ৯৬ বছর বয়সী প্রায় ৬০০ জনের ওপর এই তৃতীয় আঙুল পরীক্ষা করে দেখেছেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, শ্রমজীবী, গৃহিণী – সবাই ছিলেন। তাঁদের হাতে এই যান্ত্রিক আঙুলটি লাগিয়ে দিয়ে খুব অল্প সময়ের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, প্রায় সবাই মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই এই অতিরিক্ত আঙুলটি ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ করতে শিখে গিয়েছিলেন।
কী ধরনের কাজ? কেউ কেবল এই কৃত্রিম বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েই ছোট ছোট পেরেক তুলে অন্য জায়গায় রাখছিলেন। কেউ বা এই যান্ত্রিক আঙুলের সাহায্যে নিজের আসল আঙুলগুলো দিয়ে নানা ধরনের জটিল আকৃতির জিনিসপত্র ধরে নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। এমনকি চোখ বন্ধ করেও কেউ কেউ এই অতিরিক্ত আঙুল দিয়ে কাজ করতে পেরেছিলেন।
তৃতীয় আঙুল মূলত একটি থ্রিডি প্রিন্ট করা যন্ত্র। এটি হাতের সাথে এমনভাবে লাগানো হয় যাতে এটি আসল বৃদ্ধাঙ্গুলের বিপরীত দিকে থাকে। এই যন্ত্রিক আঙুলটিকে পায়ের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ডান পা দিয়ে চাপ দিলে যান্ত্রিক আঙুলটি হাতের তালুর দিকে ভাঁজ হয়ে যায়, আর বাম পা দিয়ে চাপ দিলে আবার সোজা হয়ে যায়।
গবেষকদের মতে, মানুষের মস্তিষ্কের এমন এক অসাধারণ ক্ষমতা আছে, যার ফলে আমরা শরীরের বাইরের যান্ত্রিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকেও নিজের বলে মেনে নিতে পারি এবং সেগুলোকে কাজে লাগাতে পারি। তৃতীয় বৃদ্ধাঙ্গুলের এই পরীক্ষাটি এই তত্ত্বকেই প্রমাণ করেছে।
এই গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য আরও উন্নত প্রোসথেটিক ডিভাইস তৈরি করা সম্ভব হবে। এমনকি একদিন হয়তো অন্য আরও যান্ত্রিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যুক্ত করে মানুষের স্বাভাবিক ক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধি করা যাবে। তবে গবেষকরা এটাও বলছেন যে, এই ধরনের প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সময় সবার কথা মাথায় রাখতে হবে। যাতে এই প্রযুক্তির সুফল সবার কাছে পৌঁছায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।