বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওজন কমানোর মোহে ভুলেও ওষুধের ব্যবহার করবেন না কারণ এতে দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে। ওজেম্পিক বা এই জাতীয় ওষুধ সবার জন্য নয়। সঠিক সমাধান তাহলে কী?
গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হতে না হতেই তার সাথে আসছে ‘পারফেক্ট ফিগার’ নিয়ে চিন্তা। চারদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন ‘পাতলা হওয়ার’ হিড়িক! এই চাপের মুখে আপনারও কি মনে হচ্ছে, “খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমাতে হবে!” সেই তাগিদে অনেকেই ঝুঁকছেন ওজেম্পিকের মতো ওজন কমানোর ওষুধের দিকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন সতর্কবার্তা! ওবেসিটি বা ওজন-জনিত সমস্যা না থাকলে এই ওষুধগুলো শরীরের জন্য বড়সড় বিপদ ডেকে আনবে।
আপনি যদি ওভারওয়েট হন (BMI ২৫+), তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিউইয়র্কের চিকিৎসক ডাঃ সু ডেকোটিস পরামর্শ দেন তরুণদের মেটাবলিক রেট এবং ইনসুলিন পরীক্ষা করানোর। এতে বোঝা যাবে আদৌ ওষুধ লাগবে কি না!মনে রাখবেন, ‘ওজেম্পিক জাতীয়’ ওষুধ শুধু ওজন কমায় না। সাথে নিয়ে আসে ভয়ঙ্কর সাইড-এফেক্ট – ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, এমনকি প্যানক্রিয়াটাইটিসও হতে পারে।
এই ওষুধগুলোর কিছু সম্ভাব্য সাইড এফেক্টও রয়েছে, যেমন:
- পেটে সমস্যা: বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি, পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা
- ক্লান্ত বোধ করা, শক্তিহীনতা
- মুখের সমস্যা: মুখ শুকিয়ে যাওয়া, স্বাদের পরিবর্তন
- পেটের খিদে কমে যাওয়া
- অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ
- পিত্তথলির পাথর
- কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস।
বিশেষ করে গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের এই ওষুধ একদমই ব্যবহার করা উচিত নয়।
ওজন কমাতে খাদ্য তালিকা:
ওজন কমানোর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে:
- ফলমূল:
আপেল,কলা,কমলালেবু,আঙ্গুর,পেঁপে,আনারস,তরমুজ,জাম্বুরা,পেয়ারা। - শাকসবজি:
পালং শাক,লাউ শাক,ব্রকলি,ফুলকপি,গাজর,বিট,টমেটো,শসা,
ঢেঁড়স,কাঁচা মরিচ। - শস্য জাতীয় খাবার:
ভাত,রুটি,ওটস,বাদামী চাল,যব,মুসুরি ডাল,ছোলার ডাল,মসুরডাল। - চর্বিহীন প্রোটিন:
মাছ,মুরগির মাংস,ডাল,ডিম,ছানা,বাদাম,কাজুবাদাম,চিনাবাদাম। - স্বাস্থ্যকর ফ্যাট:
জলপাই তেল,সয়াবিন তেল,অ্যাভোকাডো,বাদাম,তিসি। - পানীয়:
পানি,লেবু, পানিনারকেল, পানিগ্রিন টি।
ওজন কমানোর একটা নমুনা ডায়েট চার্ট (সকাল, দুপুর, রাত)
সময় | খাবার | পরিমাণ |
---|---|---|
সকাল | সকালের খাবার | * 1 কাপ ওটমিল দুধ দিয়ে (কম চর্বিযুক্ত) |
* 1 টি ডিম সেদ্ধ (পাতলা করে কাটা) | ||
* 1/2 কাপ কাটা ফল (যেমন: আপেল, কলা, পেঁপে) | ||
* 1 কাপ চা/কফি (কম চিনি দিয়ে) | ||
দুপুর | মধ্যাহ্নভোজ | * 1 কাপ ভাত (বাদামী) |
* 1 কাপ মুরগির ঝোল (পাতলা) | ||
* 1 কাপ শাকসবজি (যেমন: লাউ, পালং শাক, মটরশুঁটি) | ||
* 1 টি ছোট মাছ (পোড়া/ঝাল) | ||
* 1 কাপ দই | ||
রাত | রাতের খাবার | * 1 দুটি রুটি (গমের) |
* 1 কাপ ডাল (মসুর/মুগ) | ||
* 1 কাপ শাকসবজি (যেমন: ঢেঁড়স, শসা, টমেটো) | ||
* 1 টি ছোট মাছ (সিদ্ধ/ঝাল) | ||
* 1 কাপ ফলের সালাদ (যেমন: আপেল, কলা, পেঁপে, শসা ) |
- এই ডায়েট চার্টটি একটি নমুনা। আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট চার্ট তৈরি করা উচিত।
- প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন (দিনে 3-4 লিটার)।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন (দিনে 30-45 মিনিট)।
- শরীরচর্চার পূর্বে ও পরে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
- তেল-মাখা খাবার, মিষ্টি, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- ধৈর্য ধরুন এবং নিয়মিত ডায়েট মেনে চলুন।
কিছু টিপস:
- খাবার ধীরে ধীরে এবং ভালো করে চিবিয়ে খান।
- খাবারের আগে 1 গ্লাস জল পান করুন।
- বেশি বেশি করে ফল এবং শাকসবজি খান।
- প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন খান।
- সপ্তাহে 1-2 দিন ফাস্টিং করতে পারেন।
- পর্যাপ্ত ঘুমোন।
- মানসিক চাপ কমিয়ে রাখুন।
ওজন কমাতে বেশ কিছু ব্যায়াম:
ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়াম ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- হাঁটা:এটি একটি সহজ এবং কার্যকর ব্যায়াম। প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটলে ওজন কমাতে সাহায্য হবে
- দৌড়ানো: এটি কার্ডিওর একটি চমৎকার ব্যায়াম।
- সাইকেল চালানো: এটি একটি মজার এবং কার্যকর ব্যায়াম।
- সাঁতার কাটা: এটি পুরো শরীরের ব্যায়াম।
- এরোবিক্স: এটি একটি উচ্চ-তীব্রতার ব্যায়াম।
- ওজন তোলা: এটি পেশী তৈরি করতে এবং শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
- পুশ-আপ: এটি বুকের পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
- সিট-আপ: এটি পেটের পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
- স্কোয়াট: এটি পা এবং নিতম্বের পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
প্রথমে ধীরে ধীরে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে ব্যায়ামের তীব্রতা বাড়ান।
প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করুন।তবে যদি আপনার কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাহলে ব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।নিয়মিত ব্যায়াম ওজন কমাতে সাহায্য করবে এবং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে।