কোলেস্টেরল শব্দটা শুনলেই যেন আমাদের কপালে একটা দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়! স্বাস্থ্য আর পুষ্টির জটিল জগতে কোলেস্টেরল একটা দো-ধারি কি তলোয়ারের মতো। শরীরের জন্য এটা যেমন দরকারি তেমনি এর ভারসাম্যহীনতা ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ।
কোলেস্টেরল আসলে দুই রকমের হয় – ‘লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন’ (LDL), যাকে আমরা সাধারণত ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল হিসেবে চিনি। আর ‘হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন’ (HDL), যা ‘ভালো’ কোলেস্টেরল । LDL ধমনীগুলোকে বন্ধ করে দেয়, বাড়িয়ে তোলে হার্টের সমস্যার ঝুঁকি। অন্যদিকে, HDL একজন রক্ষাকর্তার মতো কাজ করে – ধমনী থেকে বাড়তি কোলেস্টেরল পরিষ্কার করে লিভারে নিয়ে যায়, যেখানে সেই কোলেস্টেরল হয় নিষ্কাশিত হয় নয়তো পুনঃব্যবহার হয়। ফলে, হার্ট থাকে সুরক্ষিত।
চলুন জেনে নিই কিভাবে ঘরে বসেই সহজ উপায়ে কমানো যায় খারাপ কোলেস্টেরল (LDL), আর বাড়ানো যায় ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা (HDL), যাতে হৃদযন্ত্র থাকে সুস্থ ও সক্রিয়।
১. নিয়মিত শরীরচর্চা
হাঁটা বা অন্য কোনো মধ্যম ধরনের শরীরচর্চা করার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন ৩০ মিনিটের র্যাপিড ওয়াক আপনার HDL এর মাত্রা বাড়াতে পারে, সেই সাথে কমিয়ে দেবে খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL। ব্যাপারটা এমন, যেন শরীরচর্চার মাধ্যমে আপনি শরীরের ভেতরের পথগুলো থেকে খারাপ কোলেস্টেরলগুলোকে ঝেড়ে ফেলছেন।
২. উপকারী ফ্যাট
সব ধরনের ফ্যাট কিন্তু খারাপ না। অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, বাদাম ইত্যাদিতে যে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট আর পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়, সেগুলো হার্টের জন্য বেশ উপকারী। এগুলো HDL বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে, হার্টের রোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।
৩. ফাইবার জাতীয় খাবার
ওটস, মটরশুঁটি, ডাল, আপেল, নাশপাতি ইত্যাদিতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার (সলিউবল ফাইবার) স্পঞ্জের মতো কাজ করে। এগুলো খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL কে শোষণ করে নিয়ে শরীর থেকে বের করে দেয়। তাই, নিয়মিত এই খাবারগুলো খেলে কোলেস্টেরল কমানোর পথে অনেকটা এগিয়ে যাবেন।
৪. হার্টের বন্ধু চা
গ্রিন টি এবং ব্ল্যাক টিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা LDL কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন রোধ করে। ধমনী ব্লক হওয়ার পেছনে এই অক্সিডাইজড LDL এর বড় ভূমিকা থাকে। তাই, প্রতি কাপ চা কল্পনা করুন ধমনী পরিষ্কার করার একটা পদক্ষেপ হিসেবে।
৫. ভেষজ
কিছু খাবারে এবং ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টে পাওয়া যায় প্ল্যান্ট স্টেরল এবং স্ট্যানল, যা অন্ত্রে কোলেস্টেরলের মতোই কাজ করে, কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়। কল্পনা করুন, এগুলো মূলত ছদ্মবেশী কোলেস্টেরল, যা শরীরকে বিভ্রান্ত করে আসল খারাপ কোলেস্টেরলকে শোষণ হতে দেয় না।
৬. কাঁচা মশলার
হলুদ, আদা, রসুন শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, এগুলো হার্টেরও বন্ধু। হলুদ প্রদাহ কমায়, আদা হজমে সাহায্য করে, আর রসুন LDL এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সব মিলিয়ে এরা একটা রিদম তৈরি করে যা শরীর এবং মন দুই-ই ভালো রাখে।
৭. দুশ্চিন্তা কমান
স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা হলো হার্টের নীরব শত্রু। মানসিক চাপের কারণে শরীরে বেশি কোলেস্টেরল তৈরি হয়। তাই, ধ্যান, যোগব্যায়াম, বা নিজের পছন্দের যেকোনো কাজের মাধ্যমে মনকে শান্ত রাখুন। চাপ যত কমবে, কোলেস্টেরলের ঝুঁকিও তত কমবে।
খারাপ কোলেস্টেরল কমানো বা ভালো কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য জীবনধারায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। ছোট ছোট পদক্ষেপ, অভ্যাসের পরিবর্তন, এবং ঘরোয়া উপায়গুলো আপনাকে কোলেস্টেরলের জটিল জগৎ থেকে বের করে এনে সুস্থ জীবনের পথ দেখাতে পারে। মনে রাখবেন, সুস্থতার পথ দীর্ঘ, এটা একটা ম্যারাথন, ১০০ মিটার দৌড় নয়।