সুস্থ থাকতে, ফিটনেস ঠিক রাখতে, বা আদর্শ শারীরিক গঠন পেতে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ডায়েট শুরু করেন। কিন্তু এই ডায়েট বাছাইয়ের একটি ভয়াবহ ফলাফল হতে পারে অপুষ্টি।
অপুষ্টি শব্দটি সাধারণত অপুষ্টির সাথে যুক্ত, কিন্তু এর ধারণা আরও ব্যাপক। এর মধ্যে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি বা অতিরিক্ত গ্রহণ – দুটোই হতে পারে অসুষম ডায়েট, ফ্যাট ডায়েট (ক্ষণস্থায়ী জনপ্রিয় ডায়েট), বা ভুল ডায়েটিং পদ্ধতির কারণে। এই প্রবন্ধটিতে ডায়েটজনিত অপুষ্টির জটিলতাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে , এর কারণ লক্ষণ এবং এটি প্রতিরোধ করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ।
ডায়েটজনিত অপুষ্টি
অপুষ্টি তখনই হয় যখন শরীর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান না পায়। যদিও এটিকে দুর্ভিক্ষ বা খাদ্যের অভাবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে মনে করা হয়, অপুষ্টি আসলে প্রচুর খাদ্যসম্পদ আছে এমন ব্যক্তিদেরও প্রভাবিত করতে পারে – বিশেষ করে যদি তাদের ডায়েট সীমিত বা ভারসাম্যহীন হয়। ডায়েটজনিত অপুষ্টিতে, শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে বঞ্চিত হয়, এবং এর কারণে নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন ক্লান্তি বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে শুরু করে, গুরুতর অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়া বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ।
কারণ ও ঝুঁকি
- অসুষম ডায়েট: যেসব ডায়েটে ক্যালরি গ্রহণের উপরে লিমিটেশন লাগানো হয় , অথবা সম্পূর্ণভাবে কয়েকটি খাবারের গ্রুপ বাদ দেয়, সেগুলোর ফলে অত্যাবশ্যক পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে। কম কার্বোহাইড্রেটের ডায়েট ফলমূল, শিম জাতীয় খাবার, এবং সম্পূর্ণ শস্যদানা খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে শরীরে ফাইবার, ভিটামিন, এবং মিনারেলের ঘাটতি হবে।
- ফ্যাট ডায়েট: দ্রুত ওজন কমানোর আকর্ষণ প্রায়ই মানুষকে ফ্যাট ডায়েটের দিকে নিয়ে যায়, যেগুলো পুষ্টির দিক থেকে ভারসাম্যহীন হতে পারে, এবং মানাও কঠিন। এই ডায়েট গুলো হয়তো একটি বিশেষ খাবার গ্রুপের ওপর বেশি জোর দিতে পারে, অন্যগুলোকে উপেক্ষা করে। এর ফলে পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হয়।
- ডায়েটের পরিকল্পনা: এমনকি তুলনামূলকভাবে বেশি ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের ক্ষেত্রেও, যেমন ভেজিটেরিয়ান বা ভেগান ডায়েট, ঠিকঠাক পরিকল্পনা না থাকলে ভিটামিন বি১২, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে।
লক্ষণগুলিকে চিনে নিন
ডায়েটজনিত অপুষ্টির লক্ষণগুলো মৃদু বা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে পারে, যে কারণে সেগুলো উপেক্ষা করা সহজ। সাধারণ কিছু লক্ষণ হল:
- অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
- চুল ও নখের স্বাস্থ্যহীনতা
- ত্বকের সমস্যা
- সংক্রমণের প্রবণতা বেড়ে যাওয়া
- মনোযোগের অভাব বা স্মৃতিশক্তির সমস্যা
ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট
ডায়েটজনিত অপুষ্টি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সচেতনভাবে খাওয়া এবং কখনও কখনও, পেশাদার পরামর্শ নেওয়া। একটি পুষ্টিকর এবং ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের জন্য এখানে কিছু কৌশল দেওয়া হলো:
- খাবারের বৈচিত্রঃ সব ধরনের খাদ্য গ্রুপের বৈচিত্র্যময় খাবার খেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের একটি বিস্তৃত পরিসর পাওয়া যায়। প্রতিটি খাদ্য গ্রুপের আলাদা উপকারিতা আছে, তাই ডায়েটে বৈচিত্র্য আপনাআপনিই পুষ্টির ভারসাম্য আনতে পারে।
- যথাযত ডায়েটঃ আপনি যদি একটি ডায়েট চার্ট অনুসরণ করার কথা ভাবেন তাহলে এর সম্ভাব্য পুষ্টিগত অভাবগুলি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। একজন ডায়টেশিয়ানের সাথে কথা বলুন ।
- পুষ্টি সম্পর্কে জানুন : পুষ্টির মৌলিক বিষয়গুলি বোঝা আপনাকে আপনার ডায়েট সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারদর্শী করে তুলতে পারে। আপনার শরীরের কী প্রয়োজন তা জানা ভীষণ জরুরী ।
- ঠিকঠাক সাপ্লিমেন্ট নিন: কিছু ক্ষেত্রে, আপনার পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্য সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজনীয় হতে পারে, বিশেষ করে নির্দিষ্ট ডায়েটের কারণে যদি কোনো ঘাটতি থাকে, অথবা স্বাস্থ্যজনিত কারণে যদি ডায়েট খুবই সীমাবদ্ধ হয়। তবে, সাপ্লিমেন্ট একটি ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের বিকল্প হতে পারে ।
- পেশাদার পরামর্শ: স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করা, বিশেষ করে ডায়েটিশিয়ান বা নিউট্রিশনিস্টদের সাথে কথা বললে ঠিকঠাক ডায়েট পরামর্শ দিতে পারে। তারা নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনার ডায়েটে যেন পুষ্টির কোনো ঘাটতি না থাকে এবং সামগ্রিকভাবে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
আমাদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার গঠনে ডায়েট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এটাও মাথায় রাখা উচিৎ ডায়েটের মাধ্যমে স্বাস্থ্যের যে উন্নতির চেষ্টা তা যেন পুষ্টির ঘাটতি ডেকে না আনে। অপুষ্টির লক্ষণগুলিকে সনাক্ত করতে পারা এবং ভারসাম্যপূর্ণ, পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা অসুষম ডায়েটজনিত ঝুঁকি কমানোর মূল ।