আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহৃত রসুনের ঝাঁঝালো স্বাদ এবং তীব্র গন্ধ হয়তো সবার পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু রসুনের ঔষধি গুণাবলী, বিশেষ করে কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগ দমনে এর কার্যকারিতা, স্বীকার করতেই হয়। বিশেষত যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া হয়, তখন এর উপকারিতা আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। কিন্তু কীভাবে রসুন আমাদের শরীরের এই দুই চিরশত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে?
রসুনের গোপন অস্ত্র: অ্যালিসিন
রসুনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক গোপন অস্ত্র হলো অ্যালিসিন। রসুন যখন কুচি করা বা চিবানো হয়, তখনই এই অ্যালিসিন নামক সালফার যৌগ উৎপন্ন হয়, যা রসুনের ঝাঁঝালো গন্ধের জন্য দায়ী। কিন্তু এই অ্যালিসিনই রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতার প্রধান উৎস। অ্যালিসিন ছাড়াও রসুনে আরও অনেক সালফার-যৌগ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
কোলেস্টেরলের বিরুদ্ধে রসুনের লড়াই
কোলেস্টেরল, বিশেষ করে খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL, আমাদের হৃদযন্ত্রের জন্য অন্যতম প্রধান শত্রু। এই খারাপ কোলেস্টেরল ধমনীর দেয়ালে জমা হয়ে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত করে, যার ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। রসুন এই খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। রসুনের অ্যালিসিন লিভারে কোলেস্টেরল তৈরির প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়, ফলে রক্তে মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে। শুধু তাই নয়, রসুনের সালফার যৌগগুলো খারাপ কোলেস্টেরলের জারণ রোধ করে, যা ধমনীর দেয়ালে প্লাক জমতে বাধা দেয় এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। এই প্রক্রিয়ায় রসুন ভালো কোলেস্টেরল বা HDL এর মাত্রা বাড়িয়ে হৃদযন্ত্রের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে রসুনের প্রতিরোধ
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ আজকের দিনে একটি বৈশ্বিক মহামারী হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়া বা ইনসুলিন প্রতিরোধ। রসুন এই ইনসুলিন প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াই করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রসুনের সালফার যৌগগুলো শরীরের কোষগুলোকে ইনসুলিনের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে, ফলে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক থাকে। এছাড়াও রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ডায়াবেটিসের কারণে সৃষ্ট জটিলতা, যেমন কিডনি বিকল, চোখের সমস্যা, স্নায়ুর সমস্যা ইত্যাদি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
খালি পেটে কাঁচা রসুন কেন বেশি উপকারী?
খালি পেটে রসুন খাওয়ার একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। সকালে খালি পেটে রসুন খেলে, এর উপকারী উপাদানগুলো অন্য কোনো খাবারের বাধা ছাড়াই সরাসরি রক্তে শোষিত হয় এবং দ্রুত কাজ শুরু করে। এছাড়াও, খালি পেটে রসুন খেলে, এর তীব্র গন্ধ এবং স্বাদের কারণে সৃষ্ট অস্বস্তি অনেকটাই কমে যায়।
সঠিক উপায়
রসুনের সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে, সকালে ঘুম থেকে উঠে ১-২ কোয়া রসুন ছিলে ভালো করে চটকে বা কুচি করে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর এক গ্লাস পানি দিয়ে সেই চটকে বা কুচি করা রসুন খেয়ে নিন।
সতর্কতা অবলম্বন
যদিও রসুনের উপকারিতা অনেক, তবুও অতিরিক্ত রসুন খাওয়া বা অন্য কোনো ওষুধের সাথে রসুন খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা রক্ত পাতলা হওয়ার ওষুধ খান, তাদের জন্য রসুনের সাথে ওষুধের মিথস্ক্রিয়া হতে পারে।
রসুনের ঔষধি গুণ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আয়ুর্বেদ থেকে শুরু করে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান, সব জায়গাতেই রসুনের গুণগান গাওয়া হয়। সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেয়ে সুস্থ থাকুন, দীর্ঘায়ু লাভ করুন। তবে মনে রাখবেন, পরিমিত পরিমাণে খেয়ে রসুনের উপকারিতা নিন।