যদি আপনি স্বাস্থ্য সচেতন হন তবে ব্রয়লার নয় কোয়েলের ডিমকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে আপনার খাদ্য তালিকায় ।কোয়েলের ডিমগুলি আকারে ছোট হলেও পুষ্টির দিক থেকে দশে দশ । অন্য যে কোনো সাধারণ ডিমের তুলনায় এদের স্বাস্থ্যগত লাভ অনেক বেশি। সাম্প্রতিক গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে কোয়েল পাখির ডিমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে, তাই স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনরা স্বাভাবিক ভাবেই ক্রমশ এই ডিমের দিকে ঝুঁকছেন।
কোয়েল পাখির ডিমে পুষ্টি
কোয়েল পাখির ডিম আকারে ছোট হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর। মুরগির ডিমের তুলনায় কোয়েল পাখির ডিমে অনেক বেশি মাত্রায় প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। বিশেষত এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন B1, ভিটামিন B2, ভিটামিন A, এবং ভিটামিন E, সেইসাথে ফসফরাস ও আয়রন থাকে। যার থেকে শরীরের নানাভাবে উপকার হয় – দৃষ্টিশক্তি থেকে ত্বকের স্বাস্থ্য, সবেতেই এর ভূমিকা আছে।
কোয়েল পাখির ডিমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভিটামিন B1 (থায়ামিন), যা শরীরে শক্তি বজায় রাখতে এবং মেটাবলিক রেট সঠিক রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন A দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে তোলে, এবং কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই ডিমগুলিতে ভিটামিন E-ও থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে এবং কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।
ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাট
কোয়েল পাখির ডিমে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ওমেগা-3 অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে, এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ কমাতে, কোলেস্টেরল কমাতে, এবং হার্টের রোগের মতো ক্রনিক ডিজিজের আশঙ্কা কমাতে এই ফ্যাটি অ্যাসিড দরকারি। তাছাড়া মস্তিষ্কের বিকাশ ও সুষ্ঠু কার্যকারিতার জন্য কোয়েল পাখির ডিমের স্বাস্থ্যকর ফ্যাটগুলি বিশেষভাবে উপকারী, তাই ছোটো-বড়ো সকলেরই খাদ্যতালিকায় এগুলির স্থান হওয়া উচিত।
আয়রন এবং অন্যান্য মিনারেল
কোয়েল পাখির ডিমে আয়রনের পরিমাণ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য যা অ্যানিমিয়া রোধ করতে এবং সার্বিক শক্তি বাড়াতে খুবই জরুরি। শরীরের সর্বত্র অক্সিজেন বহন করে নিয়ে যায় হিমোগ্লোবিন এবং এর মূল উপাদানই হলো আয়রন। তাছাড়া হাড় ও দাঁতের জোর বাড়াতে ফসফরাস দরকার। কোয়েল পাখির ডিম থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ফসফরাস পাওয়া যায়।
মুরগীর ডিম ও কোয়েলের ডিম
মুরগির ডিমের তুলনায় কোয়েল পাখির ডিমে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বেশি মাত্রায় থাকে। শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব রোধ করে ক্রনিক ডিজিজের আশঙ্কা কমায় এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে থাকে সেলেনিয়াম এবং জিঙ্ক যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মেটাবলিজম সুষ্ঠুভাবে চালু থাকে।
কোয়েল পাখির ডিম কতটা উপকারী তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। International Journal of Scientific and Research Publications এর একটি গবেষণাপত্রে কোয়েল পাখির ডিমের বায়োঅ্যাক্টিভ কম্পোনেন্টস এবং মনুষ্যশরীরে সেগুলির প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই গবেষণাগুলি নিশ্চিত করে যে নিয়মিতভাবে কোয়েল পাখির ডিম খেলে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উন্নত হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, এবং সার্বিকভাবে পুষ্টির অভাব দূর হয়।
যারা অত্যন্ত পুষ্টিকর ডিম খেতে চান তাদের জন্য কোয়েল পাখির ডিম একদম আদর্শ। এর পুষ্টিগুণ অসাধারণ এবং শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য এগুলি আশ্চর্য কার্যকরী – তাই অন্য যেসব ডিম সাধারণত খাওয়া হয় সেগুলির থেকে চেয়ে এটি বেশি ভালো ।
কোয়েল পাখির ডিমে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলি এবং তাদের স্বাস্থ্যগত উপকারিতার এক ঝলক
পুষ্টি উপাদান | উপাদানের পরিমাণ (প্রতি 100 গ্রামে) | স্বাস্থ্যগত উপকারিতা |
---|---|---|
প্রোটিন | ১৩ গ্রাম | পেশী গঠন, শরীরের মেরামত এবং বৃদ্ধি সহায়তা করে |
ফ্যাট | ১১ গ্রাম | হরমোন উৎপাদন এবং ভিটামিন দ্রবীভূতকরণে সাহায্য করে |
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড | উল্লেখযোগ্য | হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং প্রদাহ হ্রাস করে |
ভিটামিন B1 (থায়ামিন) | উচ্চ পরিমাণে | কার্বোহাইড্রেটের পাচন এবং এনার্জি উৎপাদনে সাহায্য করে |
ভিটামিন B2 (রিবোফ্লাভিন) | উচ্চ পরিমাণে | চোখের স্বাস্থ্য উন্নতি এবং কোষের বৃদ্ধি এবং মেরামতে সাহায্য করে |
ভিটামিন A | উচ্চ পরিমাণে | চোখের স্বাস্থ্য উন্নতি, ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতি করে |
আয়রন | উচ্চ পরিমাণে | অক্সিজেন পরিবহন এবং এনার্জি উৎপাদনে সাহায্য করে |
ফসফরাস | উচ্চ পরিমাণে | হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নতি করে |