শিশু কিশোর থেকে গর্ভবতী মায়ের যথাযত শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য যথাযত পুষ্টি ভীষণ জরুরী । আর এই পুষ্টির অন্য তম উপাদান হল ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিড যা ভিটামিন বি৯ নামেও পরিচিত । ফোলেট প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন খাদ্যে পাওয়া যায়, যেমন সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, মটরশুটি এবং সমৃদ্ধ দানাশস্যে। এটি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং এর অভাব বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ফোলেটের অভাবে কী হয়:
ফোলেটের অভাব বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা বিশদভাবে নিচে আলোচনা করা হল:
অ্যানিমিয়া:
- মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া: ফোলেটের অভাবে ডিএনএ সংশ্লেষণ বিঘ্নিত হয়, ফলে বৃহৎ, অপরিণত লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয় যা যথাযথ অক্সিজেন বহন করতে পারে না। এর ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
- হিমোগ্লোবিন স্তর হ্রাস: লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে গেলে হিমোগ্লোবিনের স্তর হ্রাস পায়, যা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে।
গর্ভকালীন সমস্যা:
- নিউরাল টিউব ডিফেক্টস: ফোলেটের অভাবে ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে বিকাশ করতে পারে না, ফলে নিউরাল টিউব ডিফেক্টস হতে পারে। এটি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ঘটে এবং শিশুর জীবনে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
- অকাল জন্ম এবং কম ওজন: ফোলেটের অভাবে গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে অকাল জন্ম এবং নবজাতকের কম ওজন হতে পারে।
হোমোসিস্টিন বৃদ্ধি:
- কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি: উচ্চ হোমোসিস্টিন স্তর ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়া (atherosclerosis), হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ফোলেট হোমোসিস্টিন স্তর নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- রক্তনালীর ক্ষতি: উচ্চ হোমোসিস্টিন রক্তনালীর প্রাচীরের ক্ষতি করে, যা রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি করে।
জীবনীশক্তি হ্রাস:
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা: ফোলেটের অভাবে শরীরের কার্যকারিতা হ্রাস পায়, ফলে ক্রমাগত ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়।
- কর্মক্ষমতা হ্রাস: মানসিক ও শারীরিক কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়, যা দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা তৈরি করে।
মেমোরি সমস্যা:
- স্মৃতিশক্তি হ্রাস: দীর্ঘমেয়াদী ফোলেটের অভাবে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে, যা ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: ফোলেটের অভাব মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন হতাশা এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
ফোলেটের অভাব পূরণের উপায়:
ফোলেটের অভাব রোধ করতে এবং সঠিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। নিম্নলিখিত কিছু খাদ্য ফোলেটের ভালো উৎস:
- সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, কলমি শাক, মুলা শাক, মেথি শাক, লাল শাক
- বিভিন্ন শাকসবজি: কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, বিট, বাঁধাকপি, ফুলকপি
- ফলমূল: পাকা পেঁপে, কমলা, কলা, আম, লিচু, আনারস, পেয়ারা, আমলকী, কুল (বরই), আঙ্গুর
এছাড়া, প্রয়োজনে ফোলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে, তবে এটি নেবার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।