ষাটের দশক থেকেই ভারতের হিন্দু ডানপন্থী সংগঠনের সঙ্গে ইসরায়েল গভীর কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। গোপন নথি ফাঁসের মাধ্যমে এই তথ্য সামনে এসেছে। নথিগুলি থেকে জানা যায়, জনসংঘ এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সদস্যরা দেশজুড়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভের আয়োজন করে ইসরায়েলকে সমর্থন করেছিলেন।
ইসরায়েলি কূটনীতিকরা এই ডানপন্থী সদস্যদের ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে অভিহিত করলেও মুসলিম বিদ্বেষের ভিত্তিতে সম্পর্কটি সতর্কতার সাথে বজায় রাখা হয়েছিল।
সত্তরের দশকে, মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের ভাই গোপাল গডসে ইসরায়েলি দূতাবাসে হাজির হন। গডসে ভাইয়ের ফাঁসির আগে দেওয়া ভাষণটি ছাপিয়ে প্রচারের জন্য ইসরায়েলের সহযোগিতা কামনা করেছিলেন। যদিও তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।
গোপন নথিগুলি প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি পত্রিকা ‘হারেৎজ’। ইতালীয় মানবাধিকার কর্মী এইতাই ম্যাক এই তথ্যগুলি উদ্ধার করেছেন। ভারতে ইসরায়েলের বিভিন্ন ডানপন্থী দলের সঙ্গে সম্পর্কের বিস্তারিত বিবরণ নথিগুলিতে রয়েছে।
ভারত ১৯৫০ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৯২ সালে। সেই সময় মুম্বইয়ে ইসরায়েলের একটি দূতাবাস ছিল।
কূটনৈতিক দলিল অনুযায়ী, ১৯৬৫ সালে তৎকালীন বোম্বাই দূতাবাসের কর্মী পেরেৎজ গর্ডন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রককে লিখেছেন, “হিন্দুরা যেভাবে মুসলমানদের ভয় ও ঘৃণা করে, সেই ঘৃণা ও ভয়কেই সুকৌশলে ব্যবহার করতে পারলে তা আমাদের পক্ষে লাভজনক হবে । ”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ‘বিরোধী শিবিরের সঙ্গে গোপন যোগাযোগের’ বিষয়েও দূতাবাস তরফে সুপারিশ করা হয়।
এমনকি ১৯৬৬ সালে, আগস্ট মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক বৈঠকে ‘মোসাদের মাধ্যমে জনসংঘের সঙ্গে সতর্কতার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের’ উপর জোর দেওয়া হয়। যদিও এক মন্ত্রক কর্মকর্তা সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন যে, “এই চরম জাতীয়তাবাদী দল কখনই ক্ষমতায় আসবে না, বা জোট সরকার গড়তে পারবে না।”
নথি অনুযায়ী, বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী একবার পিএলও প্রতিনিধিদের মুম্বই অবতরণের প্রতিবাদে একটি বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরে তাদের বিমান দিল্লিতে অবতরণ করতে বাধ্য করা হয়।
এছাড়াও রয়েছে জঙ্গি সংগঠন শিবসেনার সঙ্গে ইসরায়েলি কূটনীতিকদের যোগাযোগের তথ্যও। ইসরায়েলি দূত রিউবেন ডাফনি শিবসেনাকে স্পষ্টভাবে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন।
১৯৯২ সালে ভারত-ইসরায়েল কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেও তার আগে থেকেই ডানপন্থী শক্তির সঙ্গে ইসরায়েলের গভীর সম্পর্কের এই ইতিহাস অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়।