কাঁঠালকে এমনিতেই ‘মিরাকেল ফ্রুট ‘ বলা হয় । শুধু স্বাদ আর গন্ধই নয় এর অসামান্য পুষ্টিগুণ কাঁঠালকে দিয়েছে এক অন্যোন্য শিরোপা । কাঁঠালের বহুমুখী উপকারিতা সকলেরই জানা তবে কাঁঠালের বীজ কিন্তু কাঁঠালের শাঁসের চেয়ে বহুগুণ বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ । কাঁঠালের বীজকে বলা হয় ‘সুপার ফুড’ ।
কাঁঠালের বীজ : পুষ্টির ভান্ডার
কাঁঠালের বীজ পুষ্টির এক বিরাট ভান্ডার। এই বীজগুলিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা পেশী গঠনের জন্য অপরিহার্য। এছাড়াও এতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে মূলত সুস্থ পরিপাকতন্ত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া, কাঁঠালের বীজ ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) এবং ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন) এর মত ভিটামিনে পরিপূর্ণ। শর্করা বিপাকের জন্য থায়ামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ – আমরা খাবারের মাধ্যমে যে সুগার গ্রহণ করি সেই সুগারকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে রাইবোফ্লাভিন শক্তি উৎপাদন এবং কোষীয় কার্যকলাপ, বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া, এই বীজগুলি পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজেরও একটি ভাল উৎস। পটাসিয়াম শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং হৃৎস্পন্দন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম সুস্থ হাড় এবং দাঁতের জন্য জরুরি, অন্যদিকে আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়, যা শরীরের সমস্ত অংশে অক্সিজেন পরিবহন করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণসম্পন্ন
কাঁঠালের বীজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, যা শরীরে ফ্রি র্যাডিকেলের সাথে লড়াই করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে এই বৈশিষ্ট্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।কাঁঠালের বীজে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতির ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং বার্ধক্যের লক্ষণগুলি কমাতে ভূমিকা রাখে পারে।
আপনার খাদ্যতালিকায় কাঁঠালের বীজ কীভাবে রাখবেন
কাঁঠালের বীজ বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হল এগুলো ভেজে নেওয়া, যা তাদের স্বাদ বাড়ায় এবং একটি মুচমুচে, পুষ্টিকর খাবার হিসেবে উপভোগ্য করে তোলে। বীজগুলি পরিষ্কার করুন তারপর শুকিয়ে নিন এবং একটি ওভেনে সেগুলি সোনালী বাদামী এবং সুগন্ধযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
কাঁঠালের বীজ খাওয়ার আরেকটি জনপ্রিয় উপায় হল সেদ্ধ করা। সেদ্ধ কাঁঠালের বীজ ভর্তা করার জন্য দারুণ হতে পারে বা মশলা দিয়ে পিষে সুস্বাদু প্যাটিস বা কাটলেট তৈরি করা যেতে পারে। আমাদের দেশে এই বীজগুলি বিভিন্ন প্রকার সবজি রান্নাতে আলুর বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
যারা রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসেন তাঁরা ভাজা কাঁঠালের বীজ গুঁড়ো করে নিতে পারেন। এটি বেকিং এবং রান্নার সময় গ্লুটেন-মুক্ত ময়দার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কাঁঠালের বীজের প্রধান উপাদানগুলি আমাদের শরীরে কীভাবে উপকার করে তা এক ঝলকে দেখে নিন
উপাদান | পরিমাণ (প্রতি 100 গ্রামে) | উপকারিতা |
---|---|---|
প্রোটিন | 6.6 গ্রাম | পেশী গঠন এবং মেরামতে সাহায্য করে |
ডায়েটারি ফাইবার | 1.5 গ্রাম | হজম সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে |
ক্যালসিয়াম | 24 মিলিগ্রাম | হাড় ও দাঁত সুস্থ রাখে |
লৌহ | 0.5 মিলিগ্রাম | রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে, অক্সিজেন পরিবহন করে |
পটাশিয়াম | 448 মিলিগ্রাম | হৃদয়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে |
ভিটামিন B1 (থায়ামিন) | 0.105 মিলিগ্রাম | কার্বোহাইড্রেটকে এনার্জিতে পরিণত করে |
ভিটামিন B2 (রিবোফ্লাভিন) | 0.055 মিলিগ্রাম | কোষ বৃদ্ধি ও বিকাশ, এনার্জি উৎপাদনে সাহায্য করে |
অজান্তেই আমরা কাঁঠালের বীজ গুলি অবহেলা করে অনেক সময় ফেলে দিই অথচ এই কাঁঠালের বীজ কত উপকারী একবার ভেবে দেখুন । প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই বীজগুলি পারে সার্বিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।