প্রচন্ড গরম পড়ছে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে অনেক আগেই । এই অবস্থায় ঘরের মধ্যে থাকাও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে , বিশেষত যাদের একতলা ছাদের বাড়ি তাদের তো সকাল দশটা বাজতে না বাজতেই ছাদ গরম হয়ে ওঠে ,আর তার নিচেতে থাকা সম্ভব হয়না । তবে আজ আমরা এমন একটা পদ্ধতির কথা বলব যে তাতে যত গরমই পড়ুক না কেন ছাদ অত গরম হবেনা আর । এই পদ্ধতিটি বহুকাল ধরে রাজস্থানে প্রচলিত । কারণ রাজস্থানে অনেক আগে থেকেই প্রচন্ড গরম পড়ে । কিন্তু এই বাংলাতেও গত কয়েক বছরে গরম রাজস্থানি গরমকে ছাপিয়ে গিয়েছে তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে কীভাবে এই গরমের থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
উপকরণ
উপকরণ ( প্রতি ঘরের জন্য আনুমানিক ) | পরিমাণ |
---|---|
চুন (শুকনো/স্লেকড লাইম) | ৫ কেজি |
জিঙ্ক অক্সাইড | ১ কেজি |
সাদা সিমেন্ট | ১.৫ কেজি |
ফেভিকল | ১.৫ কেজি |
প্রথমে ছাদটাকে ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। জল দিয়ে একবার ধুয়ে ফেলুন । মনে রাখবেন ছাদ যত পরিষ্কার হবে এই কোট তত স্থায়ী হবে ।
এবারে পরের দিনে কী কী পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজটি করবেন তা নিচে দেওয়া হল
কাজের পদ্ধতি
ধাপ | কাজ |
---|---|
১ | চুন ভিজিয়ে রাখুন: একটি ধাতব পাত্রে চুন ভিজিয়ে রাখুন। রাতভর ভিজিয়ে রাখলে ভালো। |
২ | মিশ্রণ তৈরি করুন: পরের দিন সকালে, ভেজানো চুন থেকে অতিরিক্ত জল ঝরিয়ে ফেলুন। একটি বড় পাত্রে ভেজানো চুন, জিঙ্ক অক্সাইড, হোয়াইট সিমেন্ট এবং ফেভিকল একসাথে ভালো করে মেশান। মিশ্রণটি এতক্ষণ মেশান যতক্ষণ না এটি ঘন এবং মসৃণ হয়। |
৩ | মিশ্রণ প্রয়োগ করুন: মিশ্রণটি একটি বালতিতে করে সাবধানে ছাদে নিয়ে যান। ঝাঁটা দিয়ে মিশ্রণটি ছাদে সমানভাবে ঢেলে দিন। মিশ্রণটি খুব বেশি পাতলা বা বেশি ঘন করবেন না। |
৪ | শুকিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন: প্রলেপটি শুকিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। এই সময় ধরে ছাদে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। |
কীভাবে কাজ করে
জিঙ্ক অক্সাইড আর হোয়াইট সিমেন্ট সূর্যের আলো খুব ভালোভাবে প্রতিফলিত করতে পারে । ছাদের রঙ উজ্জ্বল সাদা হওয়ায় তাপ শোষণ করে খুবই কম এবং আস্তরণটি উজ্জ্বল প্রতিফলক হওয়ায় সূর্য থেকে আসা আলোকে প্রতিফলিত করে বাইরে ফিরিয়ে দেয়, তাই ঘরের ভেতরে তাপমাত্রা বেশ কমে যায়। । এই মিশ্রণে চুন শক্তিশালী আঠা হিসেবে কাজ করে, আর ফেভিকল মিশ্রণকে আরও মজবুত ভাবে ছাদে লেগে থাকতে সাহায্য করে। ফলে ছাদে একটি শক্ত আস্তরণ পড়ে যায়।
খরচ ও স্থায়িত্ব
এই প্রলেপ অবশ্য সাময়িক। আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে এর স্থায়িত্ব ২-৩ বছর, বিশেষত বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে আস্তরণ ধুয়ে যেতে পারে। তবে পদ্ধতিটি বেশ সাশ্রয়ী – প্রতি ঘরে খরচ মোটামুটি ৭০০-৮০০ টাকার মতো, যা আরাম আর স্থায়িত্বের বিনিময়ে বেশ কম।
তাছাড়া শুধু ঘর ঠান্ডা করাই নয়, এই প্রলেপ ছাদকেও সুরক্ষা দেয়। আবহাওয়া থেকে ক্ষয়রোধ করে ছাদের আয়ু বাড়ায়। গরম আবহাওয়ায় থাকার আরাম বাড়াতে এই পদ্ধতিটি বেশ স্থায়ী এবং সাশ্রয়ী!
সতর্কতা:
- এই পদ্ধতিটি শুধুমাত্র কংক্রিটের ছাদের জন্য উপযুক্ত।
- ছাদে আগুন জ্বালানো বা অন্য কোন উত্তাপ উৎস ব্যবহার করা এই প্রলেপকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- বৃষ্টির পানি প্রলেপটি ধুয়ে ফেলতে পারে। তাই প্রয়োজনে মেরামত করতে হবে।
টিপস:
- মিশ্রণ তৈরি করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। জিঙ্ক অক্সাইড এবং হোয়াইট সিমেন্ট ডাস্ট থেকে সমস্যা হতে পারে, তাই মাস্ক এবং চশমা পরে কাজ করুন।
- মিশ্রণটি ছাদে প্রয়োগ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। ছাদ থেকে পড়ে গেলে আঘাত লাগতে পারে।
- প্রলেপটি শুকিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। এই সময় ধরে ছাদে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- প্রলেপটি নিয়মিত পরিদর্শন করুন এবং প্রয়োজনে মেরামত করুন।