এতদিন ধারণা ছিলো টেস্টোস্টেরন বেশি থাকলে পুরুষের আয়ু কমে। কিন্তু Annals of Internal Medicine সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় উল্টো কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হচ্ছে, টেস্টোস্টেরন কম থাকলে বরং পুরুষের আয়ু কমে যেতে পারে।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ১১টি উচ্চমানের সমীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখেছেন, যাদের টেস্টোস্টেরন কম, তাদের যেকোনো কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হৃদরোগ।
হৃদরোগের সাথে সম্পর্ক
পুরুষদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ। যেসব কারণে হৃদরোগ হয়, সেগুলোর সাথে যৌন অক্ষমতারও সম্পর্ক আছে। হৃদরোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই অনেক সময় পুরুষের যৌন অক্ষমতার সমস্যা দেখা দেয়। যেহেতু টেস্টোস্টেরন যৌন অক্ষমতার সাথে জড়িত, তাই টেস্টোস্টেরন কম থাকাটা হৃদরোগ এবং যৌন অক্ষমতার দুটোর সাথেই সম্পর্কিত হতে পারে।
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়া
৩০ বছর বয়স থেকে সাধারণত পুরুষদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রতি বছর প্রায় ১% করে কমতে থাকে। এই ঘটনাকে কখনো কখনো পুরুষদের মেনোপজ বা অ্যান্ড্রোপজ বলা হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অণ্ডকোষে টেস্টোস্টেরন তৈরি হওয়া কমে যায়। দীর্ঘস্থায়ী রোগও এই হ্রাসকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
কারণ নাকি প্রভাব?
টেস্টোস্টেরন কম থাকার প্রভাব বোঝার ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, টেস্টোস্টেরন কম থাকাটা আসলে অন্য রোগের কারণ নাকি অন্য রোগের প্রভাবে টেস্টোস্টেরন কমে যায়, তা বোঝা। গবেষণায় বলা হয়েছে, টেস্টোস্টেরন কম থাকাটা হয়তো অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ, মৃত্যুর সরাসরি কারণ নয়। বিভিন্ন রোগ, বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সাথে জড়িত রোগ যেমন স্থূলতা, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
প্রস্টেট ক্যান্সারের রোগীদের ক্ষেত্রে একটা প্রাসঙ্গিক উদাহরণ দেখা যায়। তাদের ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের জন্য যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তাতে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা অনেক কমে যায়। যদিও এটি ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, এর ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ থেকে বোঝা যায় যে টেস্টোস্টেরন কম থাকলে স্বাস্থ্যের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কতটুকু কম হলে “কম” টেস্টোস্টেরন?
“কম” টেস্টোস্টেরন বলতে কী বোঝায়, তা বলা বেশ কঠিন। গড় টেস্টোস্টেরন মাত্রার উপর ভিত্তি করে একটা স্বাভাবিক মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যদি কারো টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা এই স্বাভাবিক মাত্রার নিচে চলে যায়, তবে তাকে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু একজনের জন্য যেটা কম, আরেকজনের জন্য তা নাও হতে পারে।
বয়স এবং ওজন অনুযায়ী স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নির্ধারণ করা বেশ জটিল, কারণ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে, কিছু সাধারণ গাইডলাইন রয়েছে যা বিভিন্ন বয়সের পুরুষদের জন্য স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নির্দেশ করে। নিচের বিভিন্ন বয়সের পুরুষদের জন্য স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দেওয়া হল
বয়স (বছর) | স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরনের মাত্রা (ng/dL) |
---|---|
19-39 | 264 – 916 |
40-49 | 201 – 993 |
50-59 | 170 – 918 |
60-69 | 156 – 700 |
70-79 | 140 – 525 |
80+ | 120 – 471 |
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ওজন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত ওজনের পরিবর্তনের সাথে সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পরিবর্তিত হয় না। ওজন সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যা (যেমন: স্থূলতা) টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রভাবিত করতে পারে।
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাস্থ্যকর রাখা
টেস্টোস্টেরন কম থাকলে যেহেতু ঝুঁকি আছে, তাই টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাস্থ্যকর রাখা জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়া রোধ করা যায়। যাদের টেস্টোস্টেরন অনেক কম, তাদের জন্য টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (TRT) একটা সমাধান হতে পারে। কিছু কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে TRT মৃত্যু এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে পারে বলে নতুন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে TRT এর ফলে হৃদরোগের সমস্যা হয় কিনা, সেটা নিয়ে এখনো সন্দেহ আছে। যদিও বর্তমানে বেশিরভাগ প্রমাণই বলছে, TRT এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে না।টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারলেও, এটি জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য হতে আরও সময় লাগবে।
স্বাভাবিক ভাবে টেস্টোস্টেরন বাড়ানোর অন্যতম কার্যকরী উপায় হল স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস । অর্থাৎ সময় মত খাওয়া ঘুমানো এবং ব্যায়াম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক করে তুলতে সাহায্য করে ।
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা যদি স্বাভাবিক সীমার বাইরে থাকে, তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।