আইফোন মধ্যবিত্তের কাছে একটা বিরাট ব্যাপার । বরাবরই এর দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে , তাই ইচ্ছা থাকলেও নেওয়া সম্ভব হয় না । তবে আজকাল চারপাশে অনেক ব্যবহৃত এবং ওপেন বক্স ফোনের দোকান দেখা যাচ্ছে সেখানে পাওয়াও যাচ্ছে আইফোনের পুরানো থেকে একেবারে লেটেস্ট মডেল । দাম নতুনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম । তবে পুরানো ফোন কেনার ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক, অনেক বিষয় মাথায় রাখতে হয় । কেননা নতুন ফোনের ক্ষেত্রে যেমন কোম্পানি ওয়ারেন্টি থাকে পুরানো ফোনের ক্ষেত্রে সেই নিশ্চয়তা না থাকাটা একটা বড় সমস্যা । তাই ব্যবহৃত ফোন কেনার সময় কিছু বিষয়ে খুঁটিয়ে দেখা জরুরি। নইলে কেনার পরে সমস্যা দেখা দিলে তখন বিষয়টি হাতের বাইরে চলে যায় ফলে করার কিছু থাকে না ।
ব্যবহৃত আইফোন কেনার সুবিধা
ব্যবহৃত আইফোন কেনার অনেক সুবিধা আছে। প্রথমত, এটি তুলনামূলক ভাবে কম দাম । ব্যবহৃত আইফোন ব্র্যান্ড নিউ ফোনের তুলনায় অনেক কম দামে পাওয়া যায়। আইফোন ১২ বা ১৩ এর মতো দামী মডেল কিনতে চাইলেও পাবেন , মডেল এবং ফোনের কোয়ালিটি যেরকম হবে তার উপরে ভিত্তি করে দাম নির্ধারিত হবে । এছাড়াও, ব্যবহৃত ডিভাইস কিনলে ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমাতে সাহায্য করা হয়, তাই এটি পরিবেশ বান্ধবও বটে।
ব্যবহৃত আইফোন কেনার ক্ষেত্রে কী কী লক্ষ্য রাখতে হবে
- ব্যাটারির স্বাস্থ্য: যে কোনো স্মার্টফোনে ব্যাটারিই সাধারণত প্রথম নষ্ট হয়ে যায়। আইফোনের “Settings” এ গিয়ে “Battery Health” দেখে নিন। অন্তত ৮০% ব্যাটারি ক্যাপাসিটি থাকা উচিত। এর চেয়ে কম মানে হল শীঘ্রই ব্যাটারি বদলাতে হতে পারে, ফলে মোট খরচ বেড়ে যাবে।
- স্ক্রিনের অবস্থা: স্ক্রিন ভালো করে পরীক্ষা করুন। কোনও ফাটল, গভীর আঁচড়, কিংবা রঙের পরিবর্তন আছে কিনা দেখুন। স্ক্রিন বদলাতে অনেক খরচ হয়ে যেতে পারে, এছাড়াও ছোটখাটো আঁচড় সময়ের সাথে সাথে চোখে লাগতে পারে।
- স্টোরেজ কতটা: নিজের কতটা স্টোরেজ প্রয়োজন সেটা আগে থেকেই ভেবে রাখুন। ব্যবহৃত আইফোনে স্টোরেজ যত বেশি, দামও তত বেশি, তবে স্টোরেজে বিনিয়োগ করলে পরে আর ঝামেলা পোহাতে হবে না। বিশেষ করে যদি মনে করেন আপনি ফোনটা কয়েক বছর ব্যবহার করবেন, তাহলে যথেষ্ট পরিমাণ স্টোরেজ নেওয়াই ভালো।
- অপারেটিং সিস্টেম : চেক করে নিন আইফোনটিতে সবচেয়ে নতুন iOS ভার্সন চলবে কিনা। পুরনো মডেলগুলি নতুন আপডেট সাপোর্ট নাও করতে পারে, সেক্ষেত্রে নতুন ফিচার বা সিকিউরিটি আপডেট পাবেন না। সাধারণত, কোন আইফোন মডেল বাজারে আসার পাঁচ-ছয় বছর পর্যন্ত নতুন iOS আপডেট পেতে থাকে।
- লক আছে কিনা দেখুন:আইফোনটি কোনও ক্যারিয়ার দ্বারা লক করা হয়েছে কিনা, কিংবা iCloud লক আছে কিনা তা যাচাই করুন। ক্যারিয়ার লক থাকলে আপনি ফোনটিতে শুধু একটিমাত্র ক্যারিয়ারের সিম কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন, আর সেটা হয়তো আপনি চান না। আইক্লাউড লক মানে হল ফোনটি হারিয়ে গিয়েছে বা চুরি হয়েছে। ফোন কেনার আগে বিক্রেতাকে অবশ্যই “Find My iPhone” ডিসেবল করতে এবং ডিভাইসটি ফ্যাক্টরি সেটিংসে ফিরিয়ে আনতে বলুন।
- ওয়ারেন্টি ও রিটার্ন পলিসি:দেখুন ফোনটির ওয়ারেন্টি আছে কিনা বা বিক্রেতা নিজে কোনো গ্যারান্টি দিচ্ছে কিনা। নামী বিক্রেতা বা প্ল্যাটফর্ম যেখানে ওয়ারেন্টি বা কিছু সময়ের জন্য ফোন রিটার্ন করার সুবিধা দেয়, সেখান থেকে কিনলে নিশ্চিন্ত থাকবেন।
- IMEI/সিরিয়াল নম্বর যাচাই করুন: আইফোনের IMEI বা সিরিয়াল নম্বর চেক করুন। অনলাইনে অনেক জায়গায় এই চেক করা যায়, তাতে দেখুন ফোনটি চুরি করা বা ব্ল্যাকলিস্টেড তো নয়।
- বাইরের অবস্থা কেমন: আইফোনের সার্বিক শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখুন। কোথাও অস্বাভাবিক ভাবে চিহ্ন আছে কিনা খুঁজুন, চার্জারের পোর্ট ও অন্য বোতামগুলি ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা দেখুন, আর ফোনটি থেকে কোন অদ্ভুত আওয়াজ হচ্ছে কিনা শুনুন।
কেনার সময়ে আরও যে বিষয়গুলি খেয়াল রাখবেন
- কেনার আগে টেস্ট করুন: সম্ভব হলে, সুরক্ষিত কোনও জায়গায় বিক্রেতার সাথে দেখা করে ফোনটির সমস্ত কার্যকারিতা পরীক্ষা করে নিন।
- দাম যাচাই করে নিন : আপনি যে আইফোন মডেলটি চান, বাজারে তার দাম কত তা জেনে নিন, তাহলে বেশি দাম দিয়ে ঠকবেন না।
- আসল অ্যাক্সেসরিস আছে কিনা জিজ্ঞাসা করুন: ফোনের সাথে অরিজিনাল চার্জার এবং হেডফোন আছে কিনা দেখুন। এগুলি থাকলে বোঝা যায় আগের মালিক ফোনটার যত্ন নিয়েছেন।
ফোন কেনার পর:
- ফোনটি ফ্যাক্টরি রিসেট করুন।
- আপনার নিজের অ্যাকাউন্ট দিয়ে iCloud এ সাইন ইন করুন।
- সফ্টওয়্যার আপডেটগুলি ইনস্টল করুন।
- আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ব্যাকআপ করুন।
এই চেকলিস্টটি আপনাকে একটি ব্যবহৃত আইফোন কেনার সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, সাবধানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কেনা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আপনি একটি ভালো মানের ফোন পান যা আপনার প্রয়োজনগুলি পূরণ করবে।