বাঙালি মানেই আলুর প্রতি তার একটু অন্যরকমের অনুরাগ , আলু ছাড়া তার চলে না । খাওয়ার থালাতে আলু ভাজা , আলু ভর্তা আলু দিয়ে নানান রকমের আয়োজনে সাজানো । কিন্তু এত কিছুর মাঝে বাদ যায় আসল জিনিসটা – আলুর খোসা । বেশিরভাগ মানুষই আলুর খোসা ছাড়িয়ে খেতে পছন্দ করেন , অথচ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই খোসাতেই রয়েছে অমূল্য সব পুষ্টির ভান্ডার।
আলুর খোসায় লুকিয়ে থাকা পুষ্টির ভাণ্ডার
- ফাইবার: আলুর খোসায় আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা হজমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এমনকি কোলন ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও কমায়।
- ভিটামিন ও খনিজ: খোসায় আছে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শরীরে কোনো ক্ষত সারাতেও সাহায্য করে ভিটামিন সি। এছাড়াও আছে বিভিন্ন বি ভিটামিন, যা শরীরের শক্তির জোগান দেয়, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। পটাশিয়ামের মতো খনিজও আছে প্রচুর, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হৃদপিণ্ড ভালো রাখে। আয়রনের উপস্থিতিও রয়েছে, যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে, রক্তাল্পতা দূর করে।
খোসা খাওয়ার উপকারিতা
- হজমের সমস্যা দূর করে: ফাইবার সমৃদ্ধ খোসা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো হজমের সমস্যা দূর হয়। খাবার ঠিকমতো হজম হলেই শরীর থাকে ঝরঝরে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ভিটামিন সি’র জন্য খোসা খেলে ঠান্ডা লাগা, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো সাধারণ অসুখ-বিসুখ কম হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়লে যেকোনো রোগ সহজে আপনার ধারেকাছে ঘেঁষতে পারবে না।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদয় সুস্থ রাখে: আলুর খোসায় থাকা প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এতে করে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভূমিকা: খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ভেতরের ক্ষতিকর উপাদানগুলো দূর করে, যা ক্যান্সার, হৃদরোগের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়: শুধু ভেতর থেকেই নয়, বাইরে থেকেও সুন্দর করে তুলতে পারে আলুর খোসা। এতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ ত্বককে মসৃণ, উজ্জ্বল আর সতেজ রাখে। ত্বকের বলিরেখা দূর করতে, ত্বক টানটান করতেও সাহায্য করে।
উপাদান | উপকারিতা |
---|---|
ডায়েটারি ফাইবার | হজমে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। |
ভিটামিন সি | ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। |
ভিটামিন বি৬ | শক্তি বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে, এবং ত্বকের পুনর্জন্মে সহায়ক। |
পটাশিয়াম | রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। |
আয়রন | রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে, এবং রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে। |
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস | শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করে, ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। |
ফোলেট (ভিটামিন বি৯) | সেল রিনিউয়াল এবং ডিএনএ সংশ্লেষণে সহায়ক, গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। |
ম্যাগনেসিয়াম | মাংসপেশি ও স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করে, হাড়ের স্বাস্থ্যে সহায়ক। |
ফসফরাস | শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে এবং হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। |
নিকোটিনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৩) | কোলেস্টেরল স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, ত্বক এবং স্নায়ু স্বাস্থ্য রক্ষা করে। |
খোসা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
খোসা খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নেওয়া উচিৎ , যাতে কোনো ময়লা বা কীটনাশক না থাকে। সবুজ বা অঙ্কুরিত আলুর খোসা একেবারেই খাওয়া উচিৎ নয় , এতে সোলানিন নামে এক ধরনের ক্ষতিকর উপাদান থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তাই সুস্বাদু আলুর সাথে এত উপকারী খোসাকে ফেলে দেওয়ার আগে একটু ভাবা উচিৎ । এত পুষ্টিগুণে ভরপুর খোসা নিয়মিত খেলে ভেতর থেকে শরীর সুস্থ থাকবে, ত্বক হবে উজ্জ্বল।