ক্যান্সার বোধহয় এ যুগের সব থেকে বড় আতঙ্কের নাম । এত অপ্রতিরোধ্য গতিতে এই রোগ বেড়ে চলেছে যে প্রায় মহামারীর আকার ধারণ করেছে । ভারত বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে ক্যান্সার বৃদ্ধির হার আশংকাজনক ভাবে ভয়ংকর ।
ক্যান্সারের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার সব থেকে সহজ দুটি উপায় হল জীবনযাত্রার মান পালটানো এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা । সুস্থ জীবনযাত্রার পাশাপাশি আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকির মধ্যেকার সম্পর্ক বোঝা খুবই জরুরি। কিছু খাবার যেমন ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে পারে, তেমনই আবার কিছু খাবার আমাদের ক্যান্সারের দিকে ঠেলে দিতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু খাবার এবং খাদ্যাভ্যাস এই লড়াইটিতে কীভাবে ভূমিকা রাখছে, আর আমাদের ক্যান্সার প্রতিরোধের পথ কীভাবে কীভাবে তৈরি করতে পারে – সেই বিষয়টিই আলোচনা করা হবে ।
প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ খাবারের অনুপাত
আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার রিসার্চের মতে, ক্যান্সার প্রতিরোধের একটি দুর্দান্ত কৌশল উদ্ভিজ্জ ও প্রানীজ খাবারের যথাযত অনুপাত । এই পদ্ধতি আপনার খাবারের দুই-তৃতীয়াংশ উদ্ভিদ জাত খাবারে এবং প্রাণীজ প্রোটিনকে এক-তৃতীয়াংশে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলে। এই খাদ্যাভ্যাসের ভারসাম্য শুধু মাংসের পরিমাণ কমানো সম্পর্কে নয় বরং বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ জাত খাবার দিয়ে ডায়েটকে সমৃদ্ধ করার বিষয়ে – যা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
খাবারের বৈচিত্র
ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে “বিভিন্ন রঙের খাবার খাওয়া” কথাটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। ফল ও সবজিতে অপরিহার্য পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আপনার প্লেটে যত বেশি উজ্জ্বল এবং বৈচিত্র্যময় রঙ থাকবে — শাক সবজি থেকে শুরু করে সব রঙের বেরি জাতীয় ফল — তত বেশি এই ক্যান্সার-প্রতিরোধী যৌগগুলি গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়বে। তাছাড়া, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, যেটি অধিক পরিমাণে ফল ও সবজি খেয়ে সহজেই করা যায়, কোলন, অন্ত্রনালী এবং কিডনির ক্যান্সার সহ অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়।
সকালের খাবার
দিনের শুরুটা ফোলেট সমৃদ্ধ একটি সুস্বাদু খাবার দিয়ে করলে তা ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। ফোলেট, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বি ভিটামিন, ফোর্টিফাইড সিরিয়াল, কমলার রস এবং ঢ্যাঁড়স চিনাবাদাম কাঠবাদাম , কলা , পেঁপে, সবুজ শাকসব্জিতে পাওয়া যায়। এটি কোষ মেরামত ও প্রজননে ভূমিকা রাখে এবং কোলন এবং স্তন ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে পারে।
কোন ধরণের পানীয় খাওয়া উচিৎ
শুধু কঠিন খাবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে পানীয়ের কথাও ভাবা যেতে পারে । চা, বিশেষ করে গ্রিন টি, ক্যান্সার বিরোধী উপাদানের জন্য পরিচিত। যদিও গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে, তবে অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রিন টিতে থাকা উপাদান যকৃত, কোলন এবং স্তনের মতো অঙ্গগুলিতে ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে ধীর বা বাধা দিতে পারে। দুধ মিশ্রিত বহু জ্বালানী চা একদম নয় ।
কী খাওয়া উচিৎ নয়
কী খাওয়া যাবেনা সেটাও ভাবা দরকার। উদাহরণস্বরূপ, মদ্যপান একেবারে বন্ধ । কারণ মদ মুখ, যকৃত এবং স্তনের ক্যান্সার সহ একাধিক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অনুরূপভাবে, প্রক্রিয়াজাত মাংস, খাদ্য সংরক্ষক পদার্থ ও এগুলো রান্না করার পদ্ধতির কারণে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি করে। এগুলো কোলোরেক্টাল এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
মাংস রান্না করার ধরন
মাংস রান্না করা কত উচ্চ তাপমাত্রায় করা হচ্ছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। ভাজা বা গ্রিলের মতো উচ্চ-তাপমাত্রার রান্নার পদ্ধতিতে কার্সিনোজেনিক যৌগ তৈরি হতে পারে। সেদ্ধ, ব্রেস (braise) করা বা বাষ্পে সিদ্ধ করা পদ্ধতিগুলো বেছে নিয়ে এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যেতে পারে। এর মানে হলো, আমরা কী রান্না করছি তার থেকেও কীভাবে রান্না করছি সেটাও বেশি জরুরি।
পরিশোধিত চিনির পরিবর্তে প্রাকৃতিক মিষ্টি
আরেকটি বিবেচনা করার মত বিষয় হলো চিনি খাওয়া। যদিও চিনি নিজেই ক্যান্সার সৃষ্টি করে না, তবে এটি স্থূলতার কারণ হতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকির একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। গুড় বা স্টেভিয়া জাতীয় প্রাকৃতিক মিষ্টি বেছে নিতে পারলে এই ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়। এতে পরিশোধিত চিনির অতিরিক্ত ক্যালোরি ছাড়াই মিষ্টতা এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায়।
সাপ্লিমেন্ট
পূর্ণাঙ্গ খাবারের পরিবর্তে কেউ যদি সাপ্লিমেন্টসের ওপর নির্ভর করে, তবে সেটাকেও নিরুৎসাহিত করা হয়। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য সংস্থাগুলির ঐক্যমত পরিষ্কার: ক্যান্সার প্রতিরোধে সম্পূর্ণ খাবার থেকে পাওয়া পুষ্টি, সাপ্লিমেন্ট থেকে পাওয়া পুষ্টির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।