স্কুল সার্ভিস কমিশনে (এসএসসি) ব্যাপক দুর্নীতির যে কেলেঙ্কারি বেরিয়েছে, তাতে এবার বিপাকে পড়তে পারে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের নির্দেশে সম্ভবত ২০১৬ সালের সমস্ত নিয়োগ পুরোপুরি বাতিল করে নতুন করে করতে হতে পারে।
বৃহস্পতিবার আদালতে শুনানির সময় এসএসসি-র কাছে প্রশ্ন করা হয়, এই পুনর্মূল্যায়নের জন্য কি তাদের কাছে যথেষ্ট নথি আছে? এসএসসি জানিয়েছে যে তাদের হাতে কোনও উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট নেই। তবে আদালত নির্দেশ দিলে, তারা সিবিআইয়ের দেওয়া ওএমআর শিট, প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর ইন্টারভিউয়ের নম্বরের ভিত্তিতে একটি নতুন প্যানেল তৈরি করতে পারে।
বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছেন যে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ – এই পুরো প্রক্রিয়াটাই হাইকোর্টের নির্দেশে বাতিল হয়ে যেতে পারে।
বিচারপতি বসাক সিবিআইয়ের হাতে থাকা ওএমআর শিটগুলোকে এসএসসি কতটা বিশ্বাসযোগ্য সেই প্রশ্নটা স্পষ্ট করে তুলে ধরেন । তারা জানিয়েছে, ওই শিটগুলো তাদের অফিস থেকে উদ্ধার হয়নি, আদালতের নির্দেশে সিবিআই সেগুলি তাদের হাতে দিয়েছে।
এর থেকেই একটা বড় প্রশ্ন উঠে আসছে – যদি এসএসসি নিজেরাই এই ওএমআর শিটের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আশ্বস্ত না হয়, তাহলে তার ভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? আদালত যদি পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেয়, সম্ভবত নতুন করে একটি পুরো প্যানেল প্রকাশ করারও নির্দেশ যেতে পারে।
বুধবার আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র এসএসসি’র সততা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিচারপতিরা যে মন্তব্য করেছেন তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ – যদি এই কমিশনকেই বিশ্বাস করা না যায়, তাহলে হয়তো সব নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত। এতে শুধু হাজার কয়েক চাকরিপ্রাপ্ত ও তাদের পরিবার নয়, প্রশ্ন উঠছে পরীক্ষায় বসা ২৩ লক্ষ প্রার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়েও।
দেশের ভবিষ্যৎ কিছু হাজার লোকের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ – এটা উঠে এসেছে আদালতের মন্তব্যে। যারা যোগ্যতাহীন, তারা শিক্ষকতা করলে কী শেখাবে, এই প্রশ্নটাও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অযোগ্যদের চাকরিতে ঢোকানো না হলে খালি পদ থেকে যাবে, সেটাও একটা সমস্যা।
শুক্রবার আবার এই মামলার শুনানি রয়েছে। দেখার, আদালত এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি আর কী কী পদক্ষেপ নেয়। তবে শুধু হাজার কয়েক শিক্ষক আর প্রার্থীর সরাসরি ভবিষ্যৎ নয়, এই মামলার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে রাজ্যে সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ।