গত বৃহস্পতিবার দিল্লী হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানী চলাকালীন হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে যে, যদি সরকার তাদের কাছে মেসেজ এনক্রিপশন ভাঙার দাবি করে, তবে তা মানতে গেলে প্রয়োজনে হোয়াটসঅ্যাপকে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
বিশ্বখ্যাত এই মেসেজিং অ্যাপটির এত কড়া সতর্কবার্তার কারণ, তারা ও তাদের মূল সংস্থা মেটা বর্তমানে দেশের তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) বিধি, ২০২১-এর বিরুদ্ধে মামলা করছে। মামলা করা হয়েছে বিশেষ করে বিধির ৪(২) ধারার বিরুদ্ধে। এই ধারা অনুসারে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী থাকা সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমগুলিকে কোনো আদালত বা যোগ্য কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলে, ছবি ভিডিও বা টেক্সট তথ্য বা মেসেজের প্রথম উৎস অর্থাৎ প্রথম কোন ব্যক্তি সেই কন্টেন্টটি পাবলিশ করেছে তা কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে ।
দিল্লী হাইকোর্টে এই বিষয়টি নিয়েই আইনি লড়াই চলছে । দেখা হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষা করার বিষয়টি এবং এই নিয়মগুলি মানতে গেলে কী কী প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে সেটা নিয়েও। হোয়াটসঅ্যাপের যুক্তি হলো ব্যবহারকারীরা তাদের এপ মূলত ব্যবহার করেন কারণ তাতে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশনের নিরাপত্তা দেওয়া হয় । এনক্রিপশন ভাঙলে ব্যবহারকারীদের আস্থা নষ্ট হবে আর তা হোয়াটসঅ্যাপের মূল নীতিরও বিরোধি । হোয়াটসঅ্যাপের আইনজীবীর বক্তব্য এটিই যে, বিশ্বের কোথাও এ ধরণের নজির নেই, কোনো দেশই কোন সংস্থাকে ব্যবহারকারীদের মেসেজ এনক্রিপশন ভাঙার জন্য জোর করে না।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এই নিয়ম মানতে গেলে ব্যাপক পরিমাণে মেসেজ দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। বিশ্বের অন্য কোন দেশই এ রকম শর্ত দেয় না। আর আইটি আইনের মূল নিয়মাবলীতেও এমন কোনও ধারা নেই। তাহলে কেন এই বিশেষ বিধি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এই যুক্তি ডিজিটাল ডেটা প্রাইভেসির ভবিষ্যৎ এবং এরকম কড়া নিয়ন্ত্রণের আওতায় টেক সংস্থাগুলির কার্যকলাপ চালানো কতটা সমস্যার তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে।
অন্যদিকে, সরকারের বক্তব্য হলো, মেসেজ যিনি প্রথম পাঠিয়েছেন সেই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার কোনো একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকতেই হবে। কারণ দেশের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যে কোনো ধরণের ভুয়ো তথ্য বা গুজব রুখতে গেলে এই তথ্যটা দরকার ।
আদালত এই জটিল সমস্যার সমাধানে দরকার সব পক্ষের কথাই শুনে আগামী ১৪ই অগাস্ট পর্যন্ত এই মামলার শুনানি মুলতবি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । ওই দিন আইটি আইনের আরও বিভিন্ন দিক নিয়ে করা বারোটিরও বেশি মামলা একসাথে দেখা হবে। এই সব মামলাগুলি ব্যক্তিগত প্রাইভেসি এবং মানুষকে নিজের মত প্রকাশে স্বাধীনতা হরণের মত গুরুতর সব অভিযোগ নিয়ে করা হয়েছে।