পশ্চিম আফ্রিকার নাইজারের সীমান্তে, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে আয়োজিত হয় একটি অদ্ভুত সাংস্কৃতিক উৎসব। যাযাবর জীবনযাপনকারী ওডাবে উপজাতির এই উৎসবটি ‘গেরেওল উৎসব’ নামে পরিচিত । টানা এক সপ্তাহ ধরে চলে এই উৎসব।এই উৎসবের মূল আকর্ষনই এই ‘স্ত্রী চুরি’ নামের এক প্রতিযোগিতা, যা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সকলকে বেশ অবাক করে।
উৎসবটি ঐতিহ্য, নৃত্য এবং প্রণয়ের এক অনন্য মেলবন্ধন। এখানে আকর্ষনের কেন্দ্রে থাকে ওডাবে পুরুষরা। মাসের পর মাস তারা নিজেদের রুপ চর্চা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।আমাদের কাছে বেশ অদ্ভুত মনে হলেও তারা বংশ পরম্পরায় এই রীতি স্বগর্বে পালন করে আসছে।
ওডাবে সমাজে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বেশ খানিকটা ভিন্ন – চোখের সাদা অংশের উজ্জ্বলতা, হাসির ঝলকানি, নাকের উচ্চতা, এই বিষয়গুলোর ওপর তারা বিশেষ জোর দেয় এবং উৎসবের প্রস্তুতিতে এই অংশগুলোকে বিশেষভাবে তুলে ধরে।
গেরেওল উৎসব যতই এগিয়ে আসে, উত্তেজনা ততই বাড়তে থাকে এই ওডাবে নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই। পুরুষরা মুখে লাল মাটি মাখে,চোখে কাজল, ঠোঁটে রঙিন লিপস্টিক লাগিয়ে নিজেদের সাজায়। মুখে সাদা রঙের নকশা আঁকে, এমনকি কেউ কেউ চুলে পালক পর্যন্ত গুঁজে নেয়। তাদের সংস্কৃতিতে সৌন্দর্যকে এইভাবেই উপলব্ধি করা হয়!
এই উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ওডাবে সম্প্রদায়ের সবচেয়ে সম্মানিত বিবাহিত মহিলারাই ‘গেরেওল উৎসবে স্ত্রী চুরির প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসনে থাকে । তবে প্রতিযোগিতা শুরুর পূর্বেই এই সকল বিচারকরাই আগে ওডাবে পুরুষদের নাচ এবং আকর্ষণের ভিত্তিতে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর পুরুষকে বেছে নেয়।তারপর সর্বসাধারণের জন্য প্রতিযোগিতা টি শুরু হয়।
এখানে পুরুষ রা মূলত নানা রকম ভাবে নৃত্য পরিবেশন করতে থাকে। তবে এখানে নাচ শুধু শারীরিক সৌন্দর্যের প্রদর্শনী নয়, বরং নারীর মন জয় করার একটি কৌশল ও বটে। এরপর কোনও মহিলা যদি কোনো পুরুষ কে পছন্দ করে তবে সে তার পছন্দের পুরুষের সাথে চলে যেতে পারে। তবে বাচ্চাদেরকে মূলত মায়েরাই সঙ্গে করে নিয়ে যায়। এই গোষ্ঠী র নারী পুরুষ সকলেই ভাবে জীবন তাদের পূর্বের সকল ভুল ভ্রান্তি কে পিছনে ফেলে নতুন ভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিচ্ছে এই ‘গেরেওল’এর মাধ্যমে।