২০২৪ এ জানুয়ারি থেকেই আস্তে আস্তে তেঁতে উঠছিল সন্দেশখালি।প্রথমে ইডির উপর হামলা তারপর একে একে শাহজাহান শেখ এবং তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে জমিদখল, ধর্ষণের অভিযোগ, সন্দেশখালির বাসিন্দাদের নিয়ে বিরোধীদের আন্দোলন, পরে শাহজাহানের গ্রেফতারি এবং শেষে গঙ্গাধর কয়ালের স্টিং ভিডিয়ো প্রকাশ। শাহজাহান কে গ্রেপ্তার করা হলেও, মমতা নিজে এই কয়েকমাসে সেদিকে পা বাড়াননি।
ফেব্রুয়ারির শেষ থেকেই লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছিল রাজ্যে। ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন শাহজাহান। মমতা তখন ছুটছেন বিভিন্ন প্রান্তে, এই লোকসভা তো এই মিছিল। কিন্তু সন্দেশখালী আশ্চর্যভাবে এড়িয়ে গিয়ে করেছেন ভোটের প্রচার।
মধ্যেই ভোট ঘোষণা এবং প্রচারে তৃণমূল নেত্রীর ব্যস্ত হয়ে পড়া। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসে যখন সন্দেশখালির অভিযোগকারিণীদের সঙ্গে কথা বলেছেন বারাসতে, তখনও দূরে থেকেছেন মমতা। তবে তাঁর প্রতিটি প্রচারেই ঘুরে ফিরে আসত সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। মমতা কখনও বলতেন, ‘‘ওখানে জমি সংক্রান্ত কয়েকটা সমস্যা ছিল। আমরা কথা বলিয়ে মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’’ কখনও বলেছেন, ‘‘এ রাজ্যে মহিলাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’ কিন্তু সন্দেশখালির এই পরিস্থিতিই আচমকাই ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যায় গোপন ক্যামেরায় তোলা ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর। গত ৩ মে ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায় সন্দেশখালি-২-এর বিজেপি মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল বলছেন, সন্দেশখালির আন্দোলন গোটাটাই সাজানো। সেখানে কারও ধর্ষণ হয়নি। ২০০০ টাকার বিনিময়ে রেখা পাত্র এবং আরও অনেকেই ধর্ষণের অসত্য অভিযোগ লিখিয়েছেন। তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে বিজেপিই এই আন্দোলন চালিয়েছে বলেও দাবি করেন গঙ্গাধর। বলেন, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টাকা এবং ফোন দিয়ে আন্দোলনে সহায়তা করেছেন।
এই ভিডিও প্রকাশের পরই নতুন মোড় নেয় মমতার আক্রমণও। তবে সেই দূর থেকেই। বাংলার মহিলাদের সম্মানহানি করা হয়েছে, তাঁদের বুঝতেও দেওয়া হয়নি তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে কী লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে— এমন অনেক কথাই প্রচার সভা থেকে বলতে থাকেন মমতা। তবে তার পরেও সন্দেশখালির সঙ্গে দূরত্ব ঘোচেনি তাঁর।
মঙ্গলবার, ২১শে মে সন্দেশখালির লোকসভা ক্ষেত্র বসিরহাটে গেলেন মমতা। বক্তৃতার শুরুতেই বললেন সন্দেশখালির নাম। বললেন, ‘‘সন্দেশখালির মা-বোনেদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তার জন্য হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখিত। মা-বোনেদের নিয়ে যেন অসম্মানের খেলা কেউ না খেলে।… মনে রাখবেন ভোটের আগে বিজেপির প্ল্যান-‘এ’ ছিল সন্দেশখালি। বাতিল হয়ে গিয়েছে। মা বোনেরাই বাতিল করে দিয়েছেন। তবে প্ল্যান-‘বি’ আছে। তাই সাবধানে থাকবেন।”
বসিরহাটের প্রচারমঞ্চেই এরপরই মমতা পরিচয় করিয়ে দেন বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি শেখ নুরুল ইসলামের সঙ্গে এবং এও বলেন যে,” হাজি যদি জেতে, তবে ভোটের ফল প্রকাশের কয়েক দিনের মধ্যে আমি প্রথম সফর করব এই সন্দেশখালিতে।”
এই উত্তাল সন্দেশখালিতে, ঘটনার ও ভয়াবহতার চূড়ান্ত পর্যায়ে মোটেই নিকটে ছিলেন না মমতা বরং খানিক দূরত্ব রেখেই সন্দেশখালির মর্মে কথা বলেছেন। কিন্তু শেষবেলায় এই প্রতিশ্রুতি কি নাড়িয়ে দেবে আপামর স্থানীয় বাসিন্দার সেই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষাও বর্তাবে 4 জুন অবধি।