কলকাতার গরমে যখন চড়চড় করে বাড়ছে, সেই সময় বাবা-মাদের কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ছেলেমেয়েদের সুস্থ রাখা । জল খাইয়ে দেওয়া থেকে ভালো ভাবে খাবার খাওয়ানো- সবদিক দিয়ে খেয়াল রাখতে হবে । এই প্রবল গরম আর আদ্রতার কারণে বাচ্চাদের নানাধরনের সমস্যা হতে পারে, যেমন জলশূন্যতা, হিট স্ট্রোক, গায়ে ঘা ইত্যাদি। তবে সামাধানও কাছাকাছিই আছে۔ কিছু ঘরোয়া উপায় আর বুদ্ধি খাটিয়ে এই গরমকে হারিয়ে দিয়ে বাচ্চাদের সুস্থ রাখা যায় ।
গরমের সাধারণ সমস্যাগুলি এবং তাদের প্রতিকার
- জলশূন্যতা: গরমে বাচ্চারা নিজেরা মনে করে যথেষ্ট পরিমাণে জল খায় না , ফলে শরীরে জলের অভাব একটা মুখ্য সমস্যা হয়ে ওঠে ।
- উপায়: সারাদিন ধরে নানাভাবে ওদের পছন্দের পানীয় খাওয়ান۔ সাধারণ জল, নিজের হাতে বানানো লেবুর শরবত, ডাবের জল, ঘোল –এগুলি শরীরে ফ্লুইডের মাত্রা ঠিক রাখে।
- হিট স্ট্রোক: খুব বেশি গরমে হিট স্ট্রোক হওয়ারসম্ভাবনা প্রবল। বিশেষ করে ছোট্টদের۔এর লক্ষণগুলি হল – খুব উচ্চ জ্বর, গা গরমহওয়া, বমিভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি ।
- উপায়: বাড়ির মধ্যে হাওয়া চলাচল করা ঘরগুলিতে শিশুকে রাখুন । খুব বেশি প্রয়োজন হলে অল্পসময়ের জন্য সকালবেলা বা সন্ধ্যায় বাইরে বার করুন। বাড়িতে হালকা সুতির জামাকাপড় পরান। নিয়ম করে জল খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরি ।
- গায়ের সমস্যা: গরমে খুব ঘাম হয়। ঘাম, ধুলাবালি, রোদ –এই তিনের মিশ্রণে চর্মরোগ হওয়ার ভয় থাকেই। নানারকম ফুসকুড়ি, গায়ে চুলকানি, ত্বকের সংক্রমণ – এইসব প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
- উপায়: বাড়িতে শীতল চন্দনের পেস্ট তৈরি করে শিশুর গায়ে মাখান। ত্বকের জ্বালা বা রোদে পোড়া ভাবের জন্য অ্যালোভেরার রস লাগান। নিমপাতার পেস্টও ত্বকের সমস্যা কমায় ।
- পেটের সমস্যা: খাবার নষ্ট হয়ে দ্রুত পেটখারাপ, ডায়ারিয়া, বমিহওয়া –এগুলি এই ঋতুর আরেক সমস্যা। কলকাতার আদ্র গরমে খাদ্য সংরক্ষণ আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে, তাই সাবধানতায় একটু বাড়তি নজর দেওয়া জরুরি।
- উপায়: হালকা সহজপাচ্য খাবার এই সময়ের জন্য উপযুক্ত । বাইরের খাওয়ার আসক্তি যতটা সম্ভব কমান। ফলমূল, সব্জি যেকোনো কিছু খাওয়ার আগে তা জলে দু’তিন বার ধুয়ে নিন।দই পেটের জন্য ভালো তাই খাবার তালিকায় রাখুন ।
সুরক্ষার আরও কিছু টিপস
- খেলতে বেরোনোর সময়: নিম আর নারকেল তেল মিশিয়ে মশা তাড়নোর লোশন বানিয়ে দিন। গরমের তেজ কমার জন্য সকালের দিকে যখন একটু কম রোদ বা বিকেলের পর রোদ নামলে সেই সময়টা খেলার জন্য বেছে নিন।
- সানস্ক্রিন ও ছাতা: বেরোনোর আগে অবশ্যই শিশুর মুখে হাতে পায়ে SPF যুক্ত সানস্ক্রিন মাখিয়ে দিন । রোদ-বৃষ্টি দুই থেকে রক্ষা করতে ছাতা বা টুপি দেবেন ।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: বাচ্চাদের খেলনা, বই, পড়ার টেবিল –যা যা ওরা ব্যবহার করে তা সাবানজলে ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন । খাবারের আগে হাত ধোওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে তাদের সাহায্য করুন ।
- হালকা সুতির পোশাক: ঢোলাঢালা সুতির পোশাক ত্বককে আরাম দেয় , আতাই এই গরমে হালকা সুতির পোশাক ব্যবহার করুন
শিশুর অসুস্থতার লক্ষণগুলি চিনে নিন
প্রতিকারের থেকেও জরুরি হল, আপনার শিশু অসুস্থ হচ্ছে কি না, সেটা বোঝার ক্ষমতা। ছোট্টরা অনেক সময় বুঝিয়ে বলতে পারে না কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে। তাই, এই লক্ষণগুলির দিকে নজর রাখুন:
- খিটখিটে ভাব বা অত্যধিক কান্না করা।
- খেলাধুলায় আগ্রহ না দেখানো, সারাক্ষণ ক্লান্ত বোধ করা।
- বারবার জল চাওয়া, তবুও মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
- খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা, খুব কম খাওয়া।
- বমি করা বা পাতলা পায়খানা হওয়া।
- অল্পতেই জ্বর চলে আসা।
- কানে ব্যথা বা গলায় ব্যথার কথা বলা।
কখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন
গরমে সাধারণ এই সমস্যাগুলি ঘরোয়া উপায়ে অনেকসময় সেরে যায়। তবে এই লক্ষণগুলি দেখলে দেরি না করে ডাক্তার দেখানো জরুরি:
- বেশি বার বমি বা ডায়ারিয়া।
- ইউরিনের পরিমাণ কমে যাওয়া বা রং গাঢ় হওয়া।
- ১০২ ডিগ্রির ওপর জ্বর।
- ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা খিঁচুনি।
গরমকালে শিশুদের বাঁচাতে গিয়ে নিজের শরীরের ওপর নজর রাখাটাও জরুরি। নিজে সুস্থ থাকলে তবেই আপনি আপনার ছোট্টটির যত্ন ঠিকমতো নিতে পারবেন। তাই বাইরের খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন, প্রচুর জল খান, ঘুমের দিকে নজর দিন। সবুজ শাকসবজি, ফলমূল সহ সম্পূর্ণ পুষ্টিকর খাদ্য আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
মনে রাখবেন, প্রতিটি বাচ্চাই আলাদা এবং তাদের শরীরের চাহিদাও আলাদা। এই পরামর্শগুলি আপনার সন্তানের ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী যথাযথভাবে মানিয়ে নিন। সামান্যতম সন্দেহ হলে বা উপরোক্ত লক্ষণগুলি দেখা দিলে বিলম্ব না করে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ নিন।