জাপানের ইয়োনাগুনি দ্বীপের কাছে সমুদ্রের তলদেশে এমন এক আবিষ্কার হয়েছে যেন রোমাঞ্চকর কোনো উপন্যাসের কাহিনী। এক বিশাল পাথুরে সভ্যতার সন্ধান পাওয়া গেছে, যার বয়স মিশরের পিরামিডগুলির চেয়েও প্রাচীন। প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং ইতিহাস-উত্সাহীদের মনে এক উত্তেজনার ঝড় তুলেছে এই ঘটনা।
এই পুরাকীর্তির আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল এর নির্মাণে ব্যবহৃত পাথরগুলির বয়স। কোনও কোনও প্রত্নতত্ত্ববিদের মতে, এইগুলি ১০,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। তার মানে শুধু যে এই সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল লিখিত ইতিহাসের আগেই, তা নয়, পৃথিবীর প্রাচীনতম মানবসৃষ্ট কাঠামোগুলির মধ্যে এর স্থান হতে পারে। অনেক আগেকার যুগে কোনও সমাজের এই ধরনের স্থাপত্য নির্মাণের সক্ষমতা ছিল, সেই ভাবনা আমাদের প্রাচীন মানব সভ্যতার দক্ষতা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
ইয়োনাগুনি স্মারক নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সমুদ্রের তলায় একটা পুরো শহর বানানোর প্রযুক্তি কোথা থেকে এসেছিল? এই সভ্যতার মানুষ কারা ছিলেন, আর হারিয়ে যাওয়ার কারণই বা কী? সমুদ্রের গভীর থেকে একটি একটি পাথর যেন আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে রহস্য, এক অজানা ধাঁাঁধার সন্ধান দিচ্ছে।
এই আবিষ্কার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, প্রাকৃতিক শক্তির ফলে এই নির্মাণের সৃষ্টি হয়েছে। কারও মতে, এর নিখুঁত নকশা কোনও উন্নত মানবসভ্যতারই কাজ। বিশেষজ্ঞদের এই মতপার্থক্য ইয়োনাগুনিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। গবেষক-অনুসন্ধানকারীদের কাছে এটি এখন আলোচনার ও অনুসন্ধানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
সমুদ্র এখনও মানুষের কাছে অনেকটাই অজানা এবং রহস্যে ঘেরা। ইয়োনাগুনির এই জলমগ্ন নগরী আমাদের পূর্বপুরুষদের অজানা দক্ষতার প্রমাণ দেয়। ডুবুরি, গবেষক – সকলকেই আমাদের অতীতের রহস্যে ডুব দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায় ইয়োনাগুনি। মনে করিয়ে দেয়, ইতিহাস শুধুই লেখা নথি নয়, পৃথিবীর অজানা গভীরেও বহু ইতিহাস লুকিয়ে আছে, আবিষ্কারের অপেক্ষায়।
সবচেয়ে অবিশ্বাস্য কথা হল, এই অদ্ভূত সব আবিষ্কার কখনও কখনও একেবারে অপ্রত্যাশিত জায়গায় হয়ে যায়। যে ডুবুরি প্রথম এই জায়গার সন্ধান পেয়েছিলেন, সেটাই তো প্রমাণ করে! ইয়োনাগুনির এই জলমগ্ন নগরী আমাদের অতীত নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়, চিরকাল তলিয়ে যাওয়া প্রাচীন জগতের নতুন দুয়ার খুলে দেয়।